মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১২

শহীদ জিয়াকে আজ বড় বেশি মনে পড়ে



ত রি কু ল ই স লা ম
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে আজ বড় বেশি মনে পড়ে। বাংলাদেশের এ ক্রান্তিকালে শহীদ জিয়াকে মনে পড়ার যথেষ্ট কারণও আছে। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উত্স। জিয়াউর রহমান এক অবিস্মরণীয় নাম। আমাদের জাতিসত্তার মহান রূপকার। স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রনায়ক। মহান মুক্তিযুদ্ধের এক বীর সেনানী। মহান স্বাধীনতার ঘোষক। তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শের মূর্ত প্রতীক।
শহীদ জিয়াকে আমরা জাতির ক্রান্তিকালে স্বরূপে দেখেছি। ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সংগ্রামে দেখেছি সমর নায়ক হিসেবে। আবার দেখেছি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে। ১৯৮১ সালে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দেখেছি আরেক রূপে, বাংলাদেশকে আধুনিক রূপে গড়ে তোলার কারিগর হিসেবে। জিয়াউর রহমানকে ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে দেখা যায় স্বমহিমায়। তাঁর উন্নত চারিত্রিক দৃঢ়তা, সততা, গভীর দেশপ্রেম আমাদের চেতনাকে শাণিত করেছে। ব্যক্তি জিয়াউর রহমান আর রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের মধ্যে আমরা কোনো তফাত খুঁজে পাই না। বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর যখন চারদিকে এক তমসাচ্ছন্ন পরিবেশ, হতাশা আর গ্লানিময় শাসন বাকরুদ্ধ অবস্থা তৈরি করেছিল, জিয়াউর রহমান তখন এগিয়ে এসেছিলেন অন্ধকারের দিশা হিসেবে। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়েই যখন প্রশ্ন উঠেছিল জিয়াউর রহমান তখন হতাশাগ্রস্ত জাতির মনে আশার সঞ্চার করেন। জিয়াউর রহমানের তুলনা তিনি নিজেই। একজন সহকর্মী হিসেবে আজ বহুদিন পর স্মৃতির মানসপটে তাঁর যে প্রতিচ্ছবি দেখি তাতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তাঁর তুলনা খুঁজে পাই না। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই কিছু ত্রুটি থাকে, বিচ্যুতি থাকে। রাষ্ট্রনায়ক বা জাতীয় নেতারাও এই সমাজেরই অংশ। ফলে আমরা দেখি একজন আদর্শবাদী নেতাও জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নীতি-আদর্শের উপরে অবিচল থাকতে পারেন না। এই বিচ্যুতি জীবনের সব অর্জনকে ম্লান করে দেয়। কিন্তু, জিয়াউর রহমানের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমরা তেমন কিছু দেখি না। সততা একজন মানুষকে মহত্ করে। সততাবিহীন জীবন নীতির প্রশ্নে আপস করে। জিয়াউর রহমান সততার ক্ষেত্রে কোনোদিন আপস করেননি। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের অনেক গভীরে তাঁর স্থান। তার সাদামাটা জীবন, নির্লোভ মানসিকতা, গভীর দেশপ্রেম বিরল। জিয়াউর রহমান পেশায় সৈনিক ছিলেন। একজন সেনানায়কের চারিত্রিক দৃঢ়তা দিয়ে তিনি তাঁর চারপাশের পরিবেশ মুগ্ধ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের এক চরম ক্রান্তিলগ্নে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। একটা জাতির জীবনে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের মানুষ এ দুয়ের জন্য যুগে যুগে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য। জিয়াউর রহমান এই দুই বিরল অর্জনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একজন সহকর্মী হিসেবে দেখেছি, কি অমিত তেজ আর সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে তাকে পরিশ্রম করতে। চারণের মতো বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন।
জিয়াউর রহমান নতুন রাজনীতি শিখিয়েছেন। সে রাজনীতি ছিল উন্নয়নের রাজনীতি। আমাদের জাতীয় চেতনা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে নতুন দেশ গড়ার রাজনীতি তিনি আমাদের শিখিয়েছেন। তিনি সমন্বয়ের নতুন যে রাজনৈতিক দর্শন উপস্থাপন করে গেছেন, তার কোনো তুলনা হয় না। আমরা সহকর্মীরা কাজ করার সময় দেখেছি, তিনি সবার কথা শুনছেন, সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, আবার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সবাইকে সম্পৃক্ত করছেন। রাজনীতির গতানুগতিকতার বাইরে উঠে তিনি সারা বাংলাদেশকে এক করেছিলেন। প্রতিদিন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। আবার ঢাকায় ফিরে এসে প্রশাসনের কাজকর্ম তদারক করেছেন। মাত্র পাঁচ বছরেই দেশের চেহারাটা পাল্টে ফেলেছিলেন তিনি। জাতির ঘনঘোর দুর্দিনে তিনি এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁর এ আগমনে সবার মধ্যেই প্রাণের স্পন্দন ফিরে এসেছিল। জীবনে যখন তিনি যে কাজে হাত দিয়েছেন, পরিকল্পনা করেছেন, তা বাস্তবায়ন করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি নতুন বিপ্লবের সূচনা করেন। তখন আট কোটি মানুষের ষোল কোটি হাতকে তিনি কর্মীর হাতে রূপান্তর করেন। তিনি লক্ষ্য করেন, যে গতানুগতিক রাজনীতি বাংলাদেশে বিদ্যমান তা দিয়ে জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। এ রাজনীতি পশ্চাত্পদ। অনেকটা প্রাচীন। বিশ্ব এগিয়ে গেছে। সদ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। এই পশ্চাত্পদতা কাটিয়ে উঠতে হলে সবাইকে নিয়েই এবং বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে এগুতে হবে। তিনি চিহ্নিত করলেন আমাদের সমস্যাগুলো কী? দেখলেন নেতৃত্ব পেলে এ জাতি পৃথিবীতে অনেক কিছুই করতে পারে। ১৯৭১ সালে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে অতি অল্প সময়েই স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তাদের এই শৌর্য সমগ্র বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু এরপর যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলো সে জন্য জনগণ দায়ী নয়। বরং এটি ছিল নেতৃত্বের ব্যর্থতা। জিয়াউর রহমান এ অবস্থায় নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু জাতির আকাঙ্ক্ষা ছিল অন্য রকম। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণেই এগিয়ে আসতে হলো তাকে। সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন তরুণ জিয়াউর রহমান। স্বস্তি পেল জাতি। এ দেশের মানুষকে তিনি হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিলেন। এজন্য জিয়াউর রহমান হয়ে উঠলেন সব আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবার সহাবস্থান নিশ্চিত করলেন জিয়াউর রহমান। তিনি যে কতটা দূরদর্শী ছিলেন তা তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের সমাজ চরমভাবাপন্ন নয়। এখানকার মানুষের আকাঙ্ক্ষাও খুব বেশি নয়। এ জাতিকে তিনি উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখালেন। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচিত করলেন। যুবসমাজকে টেনে আনলেন উন্নয়নের মূল স্রোতে। আমরা অনেকেই সে সময় ছিলাম ভিন্ন ধারার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে যুক্ত। জিয়াউর রহমান সবাইকে কাছে টেনে আনলেন। তিনি কোনো পার্থক্য করলেন না। মুসলিম দুনিয়ার সঙ্গেও তৈরি করলেন নতুন সেতুবন্ধন। প্রযুক্তিনির্ভর দেশগুলো থেকে তিনি প্রযুক্তি আমদানি করলেন। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশকে তিনি সবুজ বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেলেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সম্মানের সঙ্গে বসবাসকে অগ্রাধিকার দিলেন তিনি। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চাইলেন অনেক উচ্চে। এগিয়ে নিয়েও গেলেন তিনি। সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা জিয়া। দক্ষিণ এশীয় সংস্থার মাধ্যমে এই অঞ্চলকে এক ভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। তিনি ছিলেন এর রূপকার। আফসোস হয় যখন দেখি, আজ একটি বিশেষ গোষ্ঠী শহীদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করার চেষ্টা করে। তাঁর অতীত কর্মকাণ্ডে কালিমা লেপন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে নতুন করে। কিন্তু শহীদ জিয়ার কর্মযজ্ঞের সময়কালে তারা কোথায় ছিলেন? সে দিন তারা তার সমালোচনা করার মতো কোনো কিছুই পাননি। অথচ আজ এতদিন পর এসে বৃথা বিতর্কের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করেননি। তাকে সামরিক শাসক বলা যায় না। তাঁর রাজনীতিতে আগমন ঘটেছিল এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে। কিন্তু এ দেশের সামরিক বাহিনীকে পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তিনি একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। তবে সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে দেননি তিনি। এ তাঁর দূরদর্শিতার আরেক পরিচয়। জিয়াউর রহমান চেয়েছেন রাজনীতিবিদরা দেশের মানুষের দোরগোড়ায় যাক। উন্নয়ন শুধু এক স্থানেই নয়, সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ুক। এ পরিকল্পনায় সফল হয়েছিলেন তিনি। আর এসব কারণেই জিয়াউর রহমান তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরও সমান জনপ্রিয়। আর তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিও এ দেশের জনগণের কাছে বিপুলভাবে সমাদৃত। এর কারণ একটিই। তা হলো এ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ছিল জিয়ার রাজনৈতিক দর্শনে। এ কারণেই তাঁর শাহাদাতের পর পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল—‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ’।
লেখক : স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও সাবেক মন্ত্রী

সরকারবিরোধী দ্বিতীয় ফ্রন্ট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী কি সজাগ?

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর বর্তমান সরকারের নানা ধরনের ভুলভ্রান্তি সম্পর্কে মাঝে মাঝে কঠোর সমালোচনাও করি, কিন্তু সেই সঙ্গে এ কথাও স্বীকার করি যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে শেখ হাসিনা এখনও ‘শিবরাত্রির সলতে।’ এই সলতেটি নিভে গেলে সামনে আবার দীর্ঘ অন্ধকার। আমাদের অনেক প্রাজ্ঞ ও প্রবীণ রাজনীতিক এবং বুদ্ধিজীবী এখন এন্তার ভাল ভাল কথা বলছেন বটে, কিন্তু দেশের ও গণতন্ত্রের বিপদ মুহূর্তে কেউ অক্সফোর্ডে, কেউ হার্ভার্ডে ছোটেন নানারকম অধ্যয়ন ও গবেষণার অজুহাতে। দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থেকে গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য কেউ থাকেন না। সাধারণ মানুষের রক্তে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলেই তারা আবার গণতন্ত্র সম্পর্কে দেশের মানুষকে ‘ছবক’ দেয়ার জন্য দেশে এসে উপস্থিত হন।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি এখন এক দারুণ ক্রান্তিলগ্নে এসে দাঁড়িয়েছে। এই রাজনীতির প্রকাশ্য শত্রুর চাইতে মিত্রবেশী শত্রুর সংখ্যা বেশি। দেশের ভেতরে এবং বাইরেও। আমরা যারা হাসিনা সরকারের ভুলভ্রান্তিগুলোর কঠোর সমালোচনা করি। তা এই সরকারের পতন কামনা থেকে করি না। করি এ জন্য যে, নিজেদের ভুলভ্রান্তির জন্য যদি এই সরকার আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে ‘মহাবীর’ তারেক এবং তার জামায়াতী আত্মীয়দের (তারেকের নিজ বর্ণনামতে) যদি আবার ক্ষমতায় বসার সুযোগ ঘটে, তাহলে বর্তমানের পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে বাংলাদেশের তুলনায় মনে হবে স্বর্গোদ্যান।
শেখ হাসিনাকে তাই জোর হাতে বলি, জেদ নয়, ধৈর্য্য ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিন। রাজা ক্যানিউটের মতো চাটুকার সভাসদদের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। বোকা মিত্রের চাইতে বুদ্ধিমান শত্রুকে গুরুত্ব দিন। মন্ত্রিসভায় যেসব বেকুব সদস্য আছে, তাঁদের কম কথা বলতে বলুন, অথবা অপসারণ করুন। সমুদ্রজয়ের চাইতে দেশের মানুষের মন জয়ের ওপর গুরুত্ব দিন। ছাত্রলীগ, যুব লীগের দ্বারা ঘনঘন সংবর্ধনা নেয়া বন্ধ করুন। অন্য সব কিছুর আগে বিদ্যুত, পানি, গ্যাসের সঙ্কট হ্রাস, সড়ক দুর্ঘটনায় নিত্য প্রাণ বলির সংখ্যা কমানোকে প্রায়োরিটি দিন।
আরও বলি, দেশে গুম, হত্যা, ধর্ষণসহ সন্ত্রাস বেড়েছে এই সত্যকে স্বীকৃতি দিন। প্রয়োজনে মন্ত্রী বদল এবং পুলিশ ও র‌্যাবে ব্যাপক রদবদল ঘটিয়ে সন্ত্রাসরোধে সরকারের আগ্রহ ও ক্ষমতার পরিচয় দিন। আগে দলের দুর্নীতিবাজদের কঠোর হাতে শাস্তি দিন। বাম্পার ধান উৎপাদনের প্রচার চালিয়ে লাভ নেই। অন্যান্য দ্রব্যমূল্য না কমলে কৃষক যদি তার ফসল বেঁচে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য কিনতে না পারে, তাহলে এই কৃষি সাফল্য তাদের জন্য কোন লাভ বয়ে আনবে না। দেশের সব শিশুর হাতে বিনামূল্যে এবং সঠিক সময়ে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দিয়েছেন, এটা সরকারের একটা ঐতিহাসিক সাফল্য। কিন্তু এই সাফল্য ধরে রাখতে হলে অধিকাংশ প্রাইমারী স্কুলের মাথার ওপর খড়ের চালাও আছে কিনা তা আগে সরকারকে দেখতে হবে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সংখ্যা ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়তে না দিয়ে সরকার ঝড়ে, বন্যায় ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাইমারী স্কুলগুলো মেরামত করুন। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত করার ব্যবস্থা করুন। প্রাথমিক শিক্ষকদের ট্রেনিং, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বেতন বৃদ্ধির ওপর জোর দিন। দেশে আইনের শাসনের দুর্বল ভিত্তি শক্ত করা হোক। চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের ক্ষমাভিক্ষা দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে যেন বিতর্কিত করে তোলা না হয়, তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।
তবে এসব কিছু করার আগে সরকারের নিজের ভিত্তি শক্ত করা দরকার। একটি যোগ্য ও দক্ষতাসম্পন্ন মন্ত্রিসভা না থাকলে আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মসূচী যতই ভাল হোক, তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। সেনাপতি যতই দক্ষ হোন, আনাড়ি সেনাবাহিনী নিয়ে যেমন যুদ্ধ জয় করা যায় না, তেমনি প্রধানমন্ত্রী যতই অভিজ্ঞ ও দক্ষ হোন, আনাড়ি মন্ত্রী নিয়ে তিনি দেশকে সুশাসন উপহার দিতে পারবেন না। এটা শত আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার যে পারছে না, তার প্রমাণ গত সাড়ে তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট পেয়েছেন। তবু তিনি কি কেবল জেদের বশেই মন্ত্রিসভা রদবদল করা থেকে বিরত রয়েছেন? হয়ত এই রদবদল তিনি এমন এক সময় করবেন, যখন সঙ্কটের নদী পাড়ি দেয়ার আর সময় থাকবে না।
বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘যুদ্ধ জয় করা সহজ, কিন্তু এই জয়ের সাফল্যকে ধরে রাখা কঠিন কাজ।’ ২০০৮ সালের ডিসেম্বর-নির্বাচনে শেখ হাসিনা যখন বিশাল জয়ের অধিকারী হন, তখন এই কথাটাকেই শিরোনাম করে আমি একটা নিবন্ধ লিখেছিলাম ঢাকার একটি দৈনিকে। লিখেছিলাম, ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা রণাঙ্গনে জিতেছি, কিন্তু রাজনৈতিক জয় সম্পূর্ণ করতে পারিনি। মিলিটারি ভিক্টোরিকে আমরা পলিটিক্যাল ভিক্টোরিতে রূপান্তর করতে পারিনি। তারই পরিণতি ’৭৫-এর আগস্ট ও নবেম্বরের নিদারুণ ট্র্যাজেডি।
এই উদাহরণ টেনে ২০০৮ সালে নির্বাচনে শেখ হাসিনার ল্যান্ডসøøাইড ভিক্টোরি সম্পর্কে লিখেছিলাম, শত্রুরা ভোটের যুদ্ধে হেরেছে। রাজনৈতিক যুদ্ধে হারেনি। তাদের অস্ত্র বল, অর্থবল বেশি। পেছনে আছে মস্ক, মিলিটারি এবং ডলার ও পেট্রো ডলারের মদদ। এই সম্মিলিত এবং সহিংস শত্রুপক্ষের শক্তিকে অবজ্ঞা করা বিরাট ভুল হবে। সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে এক ফ্রন্টে নয়, এবার বহু ফ্রন্টে প্রচ- যুদ্ধ চালাতে হবে। তিনি যেন ভুল না করেন। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব না দিয়ে যেন এমন দক্ষ ও অভিজ্ঞ মন্ত্রিসভা গঠন করেন, যে মন্ত্রিসভা সব ব্যাপারে শুধু তাঁর হুকুমের অপেক্ষা না করে নিজেরা বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং প্রবল শক্তিশালী শত্রুপক্ষের মোকাবেলায় রণকৌশল নির্ধারণ করতে পারেন। 
মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি, শেখ হাসিনা তাঁর ত্রিশ বছরের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দ্বারা কি ধরনের শক্তিশালী মন্ত্রিসভা গঠন করেন তা দেখার জন্য। মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম যখন ঘোষিত হলো, তখন সেই তালিকার অধিকাংশ সদস্যের নাম দেখেও বিশ্বাস করতে প্রবৃত্তি হয়নি। সামনের প্রচ- যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী এমন সহকর্মী বেছে নিয়েছেন! দুঃখে, হতাশায় অভিভূত হয়ে এই ‘জনকণ্ঠ’ পত্রিকায় সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম, যার শিরোনাম ছিল ‘আশাভঙ্গ হয়নি, তবে আশাহত হয়েছি।’ 
তারপর সাড়ে তিনবছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এ সাড়ে তিন বছরের প্রতিটি মুহূর্ত কামনা করেছি, আমার মনের আশাহত অবস্থা যেন সত্যি সত্যি আশাভঙ্গে পরিণত না হয়। আশাভঙ্গ হয়েছে বলব না। তবে আশাহত অবস্থা থেকে মুক্তি পাইনি। এ সরকারের সাফল্য অনেক। অধিকাংশই আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। জাতীয় জীবনে তার সুফল অবশ্যই বর্তাবে। কিন্তু এই সাফল্যের অধিকাংশের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতায়। আর বেশিরভাগ মন্ত্রী এই সাফল্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসার কীর্তন গায়ক; সাফল্যের ভাগিদার নন। কথায় বলে ঢোলের বাদ্য থামলেই মিষ্টি। মন্ত্রিসভার এই কীর্তন গায়কদের কীর্তন বন্ধ হলেই মাত্র দেশবাসী এবং প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বস্তি পাবেন। 
এটা বলা বাহুল্য হবে না যে, সারা দক্ষিণ এশিয়ায় শেখ হাসিনার মতো সাহসী রাজনৈতিক নেত্রী এখন নেই। যার জীবননাশের জন্য যত হামলা হয়েছে, বিশ্বের কোন অকমিউনিস্ট ও গণতান্ত্রিক দেশের নেতার ওপর তত হামলা হয়নি। তাঁর জীবননাশ অবথা তাঁর সরকারের পতন ঘটানোর জন্য (অর্থাৎ দেশের স্বাধীনতার মূল ভিত্তি ধ্বংস করার জন্য) দেশী- বিদেশী মদদপুষ্ট যত শক্তিশালী জোট তৈরি হয়েছে, তত শক্তিশালী জোট বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধেও তৈরি হয়নি। বঙ্গবন্ধু মিত্র বাছাইয়ে ভুল করেননি। আমার ভয়, শেখ হাসিনা মিত্র বাছাইয়ে ভুল করেন এবং তাঁকে এবং গণতান্ত্রিক বাংলার অস্তিত্বকে ধ্বংস করার জন্য একটার পর একটা যে শক্তিশালী ফ্রন্ট তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে, তাদের শক্তির যথার্থ পরিমাপ করে তাদের মোকাবিলা করার মতো দক্ষ সরকার গঠনকে গোড়া থেকেই গুরুত্ব দেননি ছোট মুখে বড় কথা বলছি, তার উচিত এখনই মন্ত্রিসভায় শক্ত হাতে রদবদল করা। কসমেটিক সার্জারি নয়, পুরো সার্জারি করা। জনগণের মনে এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যে, সরকার শক্তিশালী হয়েছে। সরকার শক্তিশালী হলে প্রশাসনও শক্তিশালী হতে বাধ্য এবং শক্তিশালী সরকার প্রায়োরিটির ভিত্তিতে জনজীবনের আশু সমস্যাগুলো সমাধানে সক্ষম হবে। জনগণের মনে এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে না পারলে বিএনপি-জামায়াতের দ্বারা নয়, জনগণের প্রোটেস্ট ভোটের ফলেই আওয়ামী লীগের বিপর্যয় ঘটতে পারে। 
বিএনপি-জামায়াতের চাইতেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সুশীল চেহারাধারী যে দ্বিতীয় ফ্রন্টটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, তাদের কার্যকলাপকে আমি বেশি ভয় করি। ২০০১ সালেও এদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করা গেছে, তখন এই সুশীল জোটের কম্বিনেশন ছিল, একটি সুশীল সমাজ নামধারী এলিট চক্র, তাদের ইংরেজী, বাংলা দুটি মুখপাত্র, জনগণের কাছে তখনও শ্রদ্ধার আসনে উপবিষ্ট কিছু রাজনৈতিক নেতা বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী এবং তাদের দ্বারা বেষ্টিত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন। এই জোটের পেছনে নেপথ্য ভূমিকা নিয়েছেন কয়েকটি শক্তিশালী এনজিও এবং পশ্চিমা দেশের কূটনীতিক। এই ফ্রন্টের অঘোষিত মুখপাত্র হিসাবে ড. কামাল হোসেন, প্রয়াত ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমদ প্রমুখকে দেখা গেছে। ড. ইউনূস একটু নেপথ্য ভূমিকায় ছিলেন। 
এক এগারোর সময়ও এই ফ্রন্ট তৎপর হয়েছিল। সবচাইতে বেশি এগিয়েছিলেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তাঁর গলায় নোবেল পুরস্কারের মাদুলি ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু শেখ হাসিনার তখনকার প্রবল জনপ্রিয়তার জোয়ারে তাঁরা সুবিধা করতে পারেননি। এবার (২০১৪ সালের সম্ভাব্য সাধারণ নির্বাচনের আগে) দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের অনেকটা অনুকূল। হাসিনা সরকারের নানা ব্যর্থতা, বিশেষ করে শেয়ার বাজারের ধস প্রতিরোধের ব্যাপারে, ইলিয়াস অপহরণ, সাগর-রুনি হত্যাকা-ের ব্যাপারে রহস্য উদ্ঘাটনে অক্ষমতা, সড়ক দুর্ঘটনা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি হ্রাস করার ব্যাপারে কোন সাফল্য দেখতে না পারা এই সরকারের অন্য সাফল্যগুলো ঢেকে দিয়েছে এবং পশ্চিমা মদদপুষ্ট এলিট ক্লাসের দ্বারা তৈরি হাসিনা-বিরোধী দ্বিতীয় ফ্রন্ট আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে মাথা তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। 
এই দ্বিতীয় ফ্রন্টের আসল উদ্দেশ্য কি, তা নিয়ে আরেকদিন সবিস্তারে আলোচনা করব। আজ শুধু এটুকু বলতে চাই, এরা এখন দলে আরও ভারি হয়েছেন। আগে এক নোবেল লরিয়েট এই ফ্রন্টে ছিলেন, এখন এক ‘নাইটহুড’ বিদেশী মুরুব্বিদের নির্দেশেই এই ফ্রন্টে এসে যুক্ত হয়েছেন। বাজারে গুজব, নোবেল লরিয়েটের অনুরোধেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাইটহুডকেও তাঁর কাছে ডেকে নিয়েছিলেন, কেবল একা নোবেল লরিয়েটকে ডাকলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে নোবেল লরিয়েট ধরা পড়ে যাবেন। তার উদ্দেশ্যটিও মানুষ সহজেই বুঝবে। ফলে নাইটহুডকে সঙ্গী করা, তাঁর ভাবখানা, ‘দত্ত কারও ভৃত্য নয়, সঙ্গে এসেছি ধরনের।’ 
বিএনপি ও জামায়াতের সরকারবিরোধী তৎপরতা প্রকাশ্য, কিন্তু এই দ্বিতীয় ফ্রন্টের তৎপরতা অপ্রকাশ্য এবং এলিটসুলভ নিরপেক্ষতার ছদ্মাবরণে ঢাকা। হাসিনা- সরকারকে এই ফ্রন্টটির তৎপরতা সম্পর্কেই বেশি সতর্ক হতে হবে। এই ফ্রন্টের ইংরেজী, বাংলা দু’টি মুখপত্রই ধীরে ধীরে ভোল পাল্টাতে শুরু করেছে। ‘বদলে দাও, বদলে যাও’ শীর্ষক মুখরোচক সেøাগানের আড়ালে এরা ফলা বিস্তার করছে। এরা সরাসরি শত্রুতা করেন। বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে পটু। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ফিফ্থ কলাম বা পঞ্চম বাহিনী নামে একটা কথা তৈরি হয়েছিল, এই পঞ্চম বাহিনী ছিল মিত্র বেশি আরও ভয়ঙ্কর শত্রু। 
বাংলাদেশের এই ফিফ্্থ কলামিস্ট বা পঞ্চম বাহিনীর কার্যকলাপ বোধে সরকার সময়মতো সতর্ক না হলে ২০০১ সালের নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। 
কথায় বলে, ‘বকাউল্লা বকতে পারে, শোনা উল্লা না শুনলে করার কী থাকে?’ আমরাও আওয়ামী লীগকে কেবল বলতে পারি, সতর্ক করতে পারি। তারা শুনবে কিনা, সতর্ক হবে কিনা সেটা তাদের ব্যাপার। তবে দেশ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে। সরকারের জনবিচ্ছিন্নতা দ্রুত বাড়ছে। আত্মসন্তোষ ও আত্মপ্রসাদের সর্বনাশা কুহক থেকে প্রধানমন্ত্রীর অবিলম্বে বেরিয়ে আসা দরকার। যুদ্ধের মাঠে দ্বিতীয় ফ্রন্টের শত্রুরাও এখন তার বিরুদ্ধে তৎপর। 

লন্ডন, ২৯ মে, মঙ্গলবার, ২০১২ ॥

Need for roundtable conference for political dialogue


Recently Bangladesh was visited by three most important leaders of three countries - Hillary Clinton from America, Pranab Mukherjee from India, and the Deputy Prime Minister from Japan. There was hope that after these visits the volatile political situation of Bangladesh would settle down and the government and main opposition will start fruitful dialogue to solve the political deadlock.
But not even before a month has passed the situation in Bangladesh has erupted and the two main parties have engaged in violent confrontation again. The hope for dialogue which was expressed by the media only a few weeks ago has been dashed. So the question is what next?
Almost all the prominent leaders of the BNP except Khaleda Zia are in jail now. The lower court did not approve their bail and the leaders were sent to prison. In response the BNP observed a day long hartal on the 17 May and there was destruction, looting and arson in the streets of Dhaka again.
The movement centering on the missing of Iliyas Ali was almost subsided but the imprisonment of the BNP leaders has added fuel to fire. The leaders were accused of violence during the previous hartals for Iliyas Ali.
To avoid arrest they absconded but after getting temporary bail from the higher court they followed the instruction of the court to appear before the lower judiciary. But the lower court did not approve their bail
and sent them to prison instead.
I have nothing to say about the verdict of the lower court about not granting bail to the opposition leaders. Everybody should obey the court orders, but the political decision of the Awami League Government to harass the opposition is questionable.
If the AL is really interested in political dialogue and to bring back the opposition to the discussion table they could avoid these actions against the BNP and their 18-party alliances leaders. When a democratic government confronts the opposition’s movement not with their political strength but with the coercive power of administration it indicates the weakness of that government, not its strength.
Street violence during a hartal is not a new thing in Bangladesh politics. When the Awami League was in opposition and they called hartal similar things happened and the-then BNP government applied the same coercive force of the administration. Ultimately it did not yield any result.
At present the same policy followed by AL government may halt the opposition’s hostility for the time being but it will surface again with the passing of time and if this confrontation continues the economic loss and political instability may destroy the fragile structure of democracy in Bangladesh.
After the visit of the three foreign leaders when the atmosphere was created for a political dialogue on different issues, including caretaker government, the government should have taken a conciliatory path avoiding the hard line. I do not know when one of our elite classes including the media are proposing and advocating for two-party or all-party discussions to solve various political problems, why they themselves are not taking an active role to pressurize both the sides to sit in a roundtable conference to end the present deadlock in the country.
In the mid 60s when there was war between India and Pakistan then the former Soviet Union intervened and pressurized the leaders of India and Pakistan to sit at a conference at Tashkent to end the war. What is happening in Bangladesh now is almost a war between the two parties and this continuous war is destroying the economic development and the country’s very fragile democratic foundation.
This undemocratic practice and dangerous agitation should be stopped and the political parties in Bangladesh should sit down for a round table conference immediately to solve the problems of the caretaker government, the trial of war criminals and the problems of corruption, terrorism and the ever-increasing social crimes.
Recently Begum Khaleda Zia in her speech in Gazipur said that the AL will not be allowed to come to power for the next forty-two years.
If the BNP leader claims that she believes in democracy she could not have uttered this sort of threat. In a multiparty democratic system election is held at regular intervals and people decide which party will govern the country. No party can monopolize power for 42 years. Even the dictatorship of Mubarak of Egypt and Gaddafi of Libya did not survive for 42 years.
In Bangladesh no democratic leader can hope that people will allow him/her to rule the country for that long. Neither the BNP nor AL should aspire for this type of prolonged monopoly of power for such a long time. This is a negation of democracy.
Bangladesh should follow the internationally accepted democratic pattern of administration and allow peaceful transfer of power in rotation and in a free and fair election. How the next election will be held, whether under a caretaker or interim government, is not an insoluble problem.
If there is an all-party roundtable conference with the participation of representatives from all professions the question can be decided amicably.
Eminent people like Dr. Yunus or Sir Abed should not go to foreign powers with the internal problems of the country. They can mobilize public opinion with their influence and social standing to pressurize both the main parties to come back to political discussions and to settle their dispute peacefully.
On the other hand, if leaders like Hillary Clinton or Pranab Mukejrjee are really interested in politics and the economic stability of Bangladesh they should bring the two leaders, Sheikh Hasina and Khaleda Zia, to the discussion table.
They should play the role like the Soviet leaders did when they organized the Tashkent Conference between Indian and Pakistani leaders to stop unnecessary bloodshed.
Instead of doing that these leaders come to Bangladesh to fulfill their own territorial interests and to advise the Bangladeshi leaders, which both the parties ignore.
Bangladesh is now going through a very difficult phase of its existence. With the change of world situation if we cannot change ourselves and adopt the policy which can solve both our internal and external problems, then a very bleak future is awaiting us.
There is still time. There is a shadow of a cold war between two emerging superpowers: China and India. If Bangladesh wants to survive in this conflict and keep its sovereignty safe and sound then there is no alternative to an immediate dialogue between the two main parties.

সোমবার, ২৮ মে, ২০১২

ব্যারিস্টার হুদার আলটিমেটাম কি বেহুদা হুমকি?

সম্প্রতি ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তাঁর দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে একটি আলটিমেটাম দিয়েছেন। আলটিমেটামটি হলো, 'আগামী ৫ জুনের মধ্যে খালেদা জিয়া যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক সংলাপে বসার আমন্ত্রণ না জানান, তাহলে ৬ জুন তিনি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও ইস্তফা দেবেন। সেদিন থেকে তাঁর নতুন রাজনীতি শুরু হবে।' তাঁর এই নতুন রাজনীতি কী হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। নতুন কোনো রাজনৈতিক দল করবেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, 'সময়ই সব কিছুর উত্তর দেবে।'
ব্যারিস্টার হুদা বিএনপির একেবারে গুরুত্বহীন নেতা নন। দলের প্রথম সারির নেতা বলে তিনি একসময় গণ্য হতেন এবং খালেদা জিয়ার সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদেও ছিলেন। তবে মাঝেমধ্যে সাহসী এবং নাটুকে কথাবার্তা বলার অভ্যাস তাঁর আছে। তাতে তাঁর ভোগান্তিও কম হয়নি। দলের হাইকমান্ড, বিশেষ করে খালেদা জিয়ার পছন্দ নয় এমন কথাবার্তা বলে তিনি একবার মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন, আরেকবার অনুরূপ কিছু কথা বলে দল থেকে বহিষ্কারের নোটিশ পেয়েছিলেন। পরে অনেক দুঃখ প্রকাশ এবং প্রকারান্তরে ক্ষমাটমা চেয়ে দলনেত্রীর অনুকম্পায় দলে থেকে যান।
এবারও তিনি প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন ডেকে খালেদা জিয়াকে যে আলটিমেটাম দিয়েছেন, তাতে দলনেত্রী খুশি হবেন না। বরং ব্যারিস্টার হুদা নিজে দল ছাড়ার আগেই তিনি তাঁকে দলের খোলা দরজা দেখিয়ে দিতে পারেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিএনপি এ ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে কি না তা আমি এখনো জানি না। যদি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়ে থাকে, তাহলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। আবার তাঁর কথাবার্তাকে খালেদা জিয়া গুরুত্ব না-ও দিতে পারেন।
ব্যারিস্টার হুদা দল ছাড়বেন না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কথা বলেন। দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য ষোলো আনা; এমনকি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতিও। ২২ মে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনেও তিনি বলেছেন, 'জনগণ চায় বিএনপি টিকে থাকুক। এই দলের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত হোক।' আমারও তাই আশা ছিল। কিন্তু দল যে তাঁর এই আশা পূরণ করেনি, সে কথাও তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন। তাঁর কথা, 'দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য, আমার দলের রাজনীতি দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। একটি দেশপ্রেমিক সংগঠন হিসেবে বিএনপির বর্তমান কর্মকাণ্ডে দেশবাসী হতাশ। যে সমর্থন বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে পেতে পারে, সেই সমর্থন রাজপথে থেকে আসবে না।'
ব্যারিস্টার হুদা সংলাপের প্রশ্নে নিজের নেত্রীকে যেমন শাসিয়েছেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও শাসিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, 'দেশবাসী আশা করেছিল সরকারের প্রধান হিসেবে আলোচনার উদ্যোগ আপনিই নেবেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেটা আপনি নেননি। আমার অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমার নেত্রী যদি আপনাকে সংলাপে ডাকেন, তাহলে আপনি সে ডাকে সাড়া দিয়ে আলোচনায় বসবেন। যদি আপনি সাড়া না দেন, তাহলে ১০ জুন-পরবর্তী সব ঘটনার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।'
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নাজমুল হুদার এই বক্তব্যও এক ধরনের আলটিমেটাম। অর্থাৎ দুই নেত্রীকেই তিনি আলটিমেটাম দিয়েছেন। তবে তাঁর নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিশেষভাবে বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী আলোচনার আহ্বান জানালেন কি জানালেন না, সেটা আমার দেশনেত্রীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে না। দেশের স্বার্থে বেগম জিয়াকেই এই আহ্বান জানাতে হবে। আর সেই লক্ষ্যেই আমার এই সংবাদ সম্মেলন।'
কেবল দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসার জন্য আলটিমেটাম দিয়েই ব্যারিস্টার হুদা ক্ষান্ত হননি, তিনি এ আলোচনার এজেন্ডার প্রস্তাবও দিয়েছেন। এই এজেন্ডা হবে, 'রাজবন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি। এক-এগারোপরবর্তী বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বিনা শর্তে প্রত্যাহার। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনায় বসা। একটি দলীয়করণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। দেশের মূল্যবান জনসম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ দেশের স্বার্থে ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা।'
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাঁর রাজনৈতিক মতের সঙ্গে আমি বহু বিষয়েই সহমত পোষণ করি না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তিনি যে একজন ভালো মানুষ- এ কথা বলতে পারি। কথাবার্তায় তিনি অনেক সময় বেহুদা কথা বললেও দলীয় স্বার্থ ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি যে অনেক সময় সাহসের সঙ্গে কথা বলেন এবং সে জন্য ভোগান্তি পোহান- এ কথাও ঠিক। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতো তিনি বহুরূপী নন এবং তাঁর মতো মিথ্যা কথা মিষ্টি ভাষায় বলতেও পারেন না। এ জন্য দলনেত্রী খালেদা জিয়ার খুব কাছের লোক তিনি হয়ে উঠতে গিয়েও হতে পারেননি।
দেশের এই রাজনৈতিক ডামাডোলে তিনি একটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে একটি ভালো প্রস্তাব দিয়েছেন এবং সঠিক কথাও অনেক বলেছেন। কিন্তু দলীয় ফোরামে কথা না বলে বা আলটিমেটাম না দিয়ে সহসা একক সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি দলীয় নেত্রীকে কেন হুমকি দিয়ে সংলাপের ডাক দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিলেন, তা অনেকের কাছে খুব তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে।
এই সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তাঁর বক্তব্যের পুরো অংশ পাঠ করে আমার মনে হয়েছে, তিনি মাঝেমধ্যে যতই বেহুদা কথা বলেন বলে অভিযোগ করা হয়, তাঁর বর্তমান সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য হয়তো ততটা বেহুদা নয়। তাঁর একটি বক্তব্যের মধ্যে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকার উদ্দেশ্যটি আঁচ করা যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, 'আমি সব কিছু জেনেশুনেই এখানে এসেছি। দলীয় ফোরামে এ ধরনের প্রস্তাব দিলে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে কি হবে না, তাও আমি জানি। তাই দলীয় ফোরামে এ ধরনের কথা বলিনি। এসব কথা বলার জন্য দল আমাকে বহিষ্কার করলে রাজনীতি ছেড়ে দেব না। বরং সেখানেই আমার রাজনীতি শুরু হবে।'
'সেখানেই আমার রাজনীতি শুরু হবে'- ব্যারিস্টার হুদার এই উক্তিটি খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ। তিনি নতুন রাজনৈতিক দল করার সম্ভাবনা সম্পর্কেও হ্যাঁ অথবা না, কিছুই বলেননি। বলেছেন, 'সময়ই সব কিছুর উত্তর দেবে।' এই জবাবও অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ। আবার দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকেই মনোনয়ন চাইবেন বলেও জোর গলায় বলেছেন। তাঁর এসব পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা থেকে যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তাকে কেউ কেউ বেহুদা কথা বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেও আবার কেউ কেউ বলেছেন, বিএনপি-রাজনীতিতে ব্যারিস্টার হুদা এখন গুরুত্বপূর্ণ নেতা নন। কিন্তু তাঁর সংবাদ সম্মেলন ডাকা এবং হুমকির সুরে কথা বলা একেবারে গুরুত্বহীন নয়।
কেন গুরুত্বহীন নয়, এ কথা বুঝতে হলে ব্যারিস্টার হুদার সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে ঢাকার কাগজে প্রকাশিত খবরের একটি অংশের দিকে নজর দিতে হব। খবরের এই অংশে বলা হয়েছে, তিনি একাই সংবাদ সম্মেলন করেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই সংবাদ সম্মেলনে সর্বক্ষণ বিটিভির ক্যামেরার উপস্থিতি। বিএনপির কোনো নেতার সংবাদ সম্মেলনে বিটিভির ক্যামেরার উপস্থিতি একটি বিরল ঘটনা। এই খবর পাঠ করে অনেকের মতো আমার মনেও প্রশ্ন জেগেছে, ব্যারিস্টার হুদা যে এই সংবাদ সম্মেলনে তাঁর দলনেত্রীকে দলছাড়ার আলটিমেটাম দেবেন এবং নেত্রীর রাজপথের আন্দোলনকে কনডেম করবেন, এ কথা কি সরকারি দলের আগেই জানা ছিল, অথবা তাদের জানিয়েই সংবাদ সম্মেলনটি করা হয়েছে? এই সম্মেলনে বিটিভির উপস্থিতি কী অর্থ বহন করে? আমি সব সময় কনসপিরেসি থিয়োরিতে বিশ্বাস করি না। ব্যারিস্টার হুদাও তাঁর দলের বিরুদ্ধে কোনো কনসপিরেসি করছেন- এ কথা বিশ্বাস হয় না। কিন্তু তিনি কি নিজের অজান্তে সরকারি দলের কোনো ট্র্যাপে পা দিয়েছেন? অথবা বিএনপির ভেতরেই যাঁরা নেত্রী খালেদা জিয়ার অবাঞ্ছিত জামায়াত-ঘেঁষা নীতি এবং জামায়াতের স্বার্থে হরতালের নামে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা ইত্যাদিতে বিরক্ত কিন্তু নিজেরা মুখ খুলে কথা বলতে পারছেন না, তাঁদের উৎসাহ ও মদদেই কি ব্যারিস্টার হুদার এই একক সংবাদ সম্মেলন? তাঁর নেপথ্যের উৎসাহদাতারা হয়তো আপাতত নেপথ্যে আছেন। ব্যারিস্টার হুদা এখন একাই সংবাদ সম্মেলন করছেন। সময় ও সুযোগ মতো তাঁরাও এসে জুটবেন।
আমার এই অনুমান যদি সঠিক হয় এবং বিএনপির ভেতরের অসন্তোষের খবর যদি সরকারের কানে গিয়ে পেঁৗছে থাকে, তাহলে তাদের উৎসাহিত হওয়ার এবং বিটিভির এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতির একটা অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়। নাজমুল হুদা একসময় জামায়াতের মঞ্চে গিয়ে বসেছেন, তাদের পক্ষে কথাও বলেছেন। এখন হয়তো তিনি বুঝেছেন, জামায়াতের মঞ্চ তাঁকে তাঁর বর্তমান পলিটিক্যাল উইলডারনেস থেকে মুক্ত করবে না, বরং তার বিপরীতে দলের ভেতর যে একটা বড় অংশের মধ্যে নীরব ক্ষোভ বইছে, তার মুখপাত্র সাজলে তিনি আবার তাঁর রাজনৈতিক একাকিত্ব ও গুরুত্বহীনতা ঘোচাতে পারেন এবং সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য এটাই উপযুক্ত মুহূর্ত।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ মহল থেকেই জেনেছি, বাইরে প্রকাশ না পেলেও বিএনপির এখন দোমনা নেতা-কর্মীর সংখ্যাই বাড়ছে। ইলিয়াস আলীকে ইস্যু করে বিএনপি সরকার পতনের ডাক দিয়ে মারমূর্তিতে এবং জামায়াতের সমর্থনে রাজপথে নামলেও কোনো সুবিধা করতে পারেনি। বিএনপির যে আন্দোলন করার শক্তি নেই এবং রাজপথের আন্দোলন দ্বারা সরকারের পতন ঘটানো যাবে না, এটা বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীরাও বুঝে ফেলেছেন। তাঁরা বলেছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অসার দাবিতে বিএনপি যদি সেই নির্বাচন বর্জন করার অবস্থানে অটল থাকে, তাহলে দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি হবে, যার ফল বিএনপি ভোগ করবে না, সুযোগ নেবে তৃতীয় পক্ষ। গতবার এক-এগারো হওয়াতে বিএনপির সুবিধা হয়নি। সুতরাং বিএনপির অধিকাংশ সংসদ সদস্য চান সংসদে ফিরে যেতে। নির্বাচন পদ্ধতির প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে একটা সম্মানজনক সংলাপ ও মীমাংসা দ্বারা নির্বাচনে যেতে। ব্যারিস্টার হুদা যদি তাঁদের এই মনের কথারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন তাঁর সংবাদ সম্মেলনে; তাহলে বিস্মিত হওয়া কিছু নেই। লক্ষ করার বিষয়, তিনি তাঁর সংবাদ সম্মেলনে বেগম জিয়ার বা তাঁর কোহর্টদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করেননি। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছেন। সরকার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখার প্রশ্নে আলোচনায় বসতে রাজি। এই সংবাদ সম্মেলনের পর সংবাদপত্রে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার হুদা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, নির্বাচনের সময় কোন সরকার ক্ষমতায় থাকবে, সেটা বড় কথা নয়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে কি না সেটাই নিশ্চিত করা দরকার। এটা দেশের মানুষেরও মনের কথা। নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, তা বড় কথা নয়, সেটি অবাধ ও সুষ্ঠু হলো কি না সেটাই বড় কথা। নির্বাচন যদি তত্ত্বাবধায়ক নামের সরকারের অধীনে হয় এবং কারচুপি ও জালিয়াতি অব্যাহত থাকে, তাহলে লাভটা কী?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা একক কণ্ঠে একটি কথা বলেছেন। দলত্যাগের হুমকি দিয়েছেন; কিন্তু এটি তাঁর একার কথা বা বেহুদা হুমকি মনে হয় না। তাঁর কণ্ঠে শক্তি জোগানোর জন্য বিএনপির ভেতরেই একটি শক্তিশালী নীরব গ্রুপ আছে। যারা এখন নীরব, পরে সরব হবে। সম্ভবত ব্যারিস্টার হুদার ভবিষ্যৎ রাজনীতি তাদের নিয়েই। তিনি ডা. চৌধুরী বা কর্নেল অলির মতো নতুন দল করার ভুল করবেন বলে মনে হয় না। মনে হয়, বর্তমান আলটিমেটামে কাজ না হলে তিনি বিএনপি নামের সাইনবোর্ডের আড়ালেই তাঁর নতুন রাজনীতি শুরু করবেন। তাতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব কতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে, তা এখনই বলা মুশকিল।
সংলাপে না গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জেদ ধরে বসে থাকলে বিএনপির ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। লাভ হবে জামায়াতের। এমনিতেই বিএনপি দলটির অর্ধাংশের বেশি জামায়াত এখনই গিলে বসে আছে। যাঁরা বেজির সাপ ভক্ষণের দৃশ্য দেখেছেন, তাঁদের কাছে বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান অবস্থানের বিষয়টি বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। বর্তমান সরকারের নানা ব্যর্থতার বিরুদ্ধে জনমনে যে ক্ষোভ, সেই ক্ষোভের ওপর বিএনপি এখন কোনোভাবে টিকে আছে। নইলে বিএনপি নামের দলের কোনো শক্তিশালী কাঠামো এখন নেই; আন্দোলন করার শক্তি তো দূরের কথা। নির্বাচনে না গেলে বিএনপি দ্রুত জামায়াতের পেটে গিয়ে অস্তিত্ব হারাবে। ব্যারিস্টার হুদার আলটিমেটাম যদি বেহুদা হুমকিও হয়ে থাকে, তাহলেও তাঁকে গুরুত্ব দিলে বেগম জিয়া নিজের নেতৃত্ব ও দলকে বাঁচাতে পারবেন।
লন্ডন, ২৮ মে, সোমবার, ২০১২

রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

আওয়ামী লীগের শক্তি ও দুর্বলতার উৎস একই


আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
গত মাসে (এপ্রিল) প্রায় কুড়ি দিন সিঙ্গাপুরে অবস্থানের সময় একটি অভাবিত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলাম। প্রশ্নটি করেছিলেন সিঙ্গাপুরের এক আইনজীবী চন্দ্রমোহন। তিনি শুধু আইনজীবী নন, সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট সদস্যও। একটি বহুতল বিল্ডিংয়ে তার অফিসে বসে গল্প করছিলাম। সিঙ্গাপুরের রাজনীতি, লীকুয়ান কেমন ব্যক্তি ছিলেন ইত্যাদি নিয়ে আলাপ। হঠাৎ তিনি প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা আওয়ামী লীগ তো শুনেছি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান গণতান্ত্রিক দল। এখন তো এই দলটিই ¶মতায়। এই দলের নেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ¶মতায় বসার তিন বছর না যেতেই নাকি দলটির জনপ্রিয়তায় ভাটার টান ধরেছে। আমাকে বলতে পারেন, এত বড় দলের শক্তি এবং দুর্বলতার আসল উৎস কী? কী শক্তির জোরে দলটি ষাট বছরের ওপর টিকে আছে? আবার কী দুর্বলতার জন্য দলটি ¶মতায় বসতে না বসতেই এত শিগগিরই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে? আমি বিদেশে বসে এমন একটি প্রশ্ন শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, এমনকি এমন প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রস্তুতিও আমার ছিল না। কিন্তু ভাবতে বসে সহসাই মাথায় একটা জবাব এলো। আমি তাকে বললাম, বর্তমান আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস শেখ হাসিনা। আবার দলটির দুর্বলতার কারণও তিনিই। আমার কথা শুনে চন্দ্রমোহন বিস্মিত হলেন। বললেন, বলেন কী? শেখ হাসিনা দলের শক্তি এবং দুর্বলতা দু’য়েরই কারণ এটা হতে পারে কি? আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন। সিঙ্গাপুরে বসে সেদিন চন্দ্রমোহন বাবুকে যে কথা বলেছিলাম, আজ সেসব কথাই একটু গুছিয়ে লিখতে বসেছি। আমি এখনও বিশ্বাস করি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতাদের হত্যাকাÊের পর সামরিক শাসনের যাঁতাকলে যখন দেশের মানুষের শ্বাসর“দ্ধ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বহীন, কর্মীরা নির্যাতিত এবং জেলে বন্দি ও অবশিষ্ট নেতাদের অনেকেই পলাতক অথবা নিষ্ক্রিয়, তখন সেনাশাসকরা ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে গেছে, আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।
প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ দাঁড়াতে পারেনি। নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব, সাহসের অভাব, কারও কারও সুযোগ সন্ধানী মনোভাব প্রভৃতি নানা কারণে আওয়ামী লীগ মাথা তুলতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর নামোচ্চারণও তখন নিষিদ্ধ। কিন্তু এই বঙ্গবন্ধুর নামের তাবিজই আওয়ামী লীগের দেহে মৃতসঞ্জীবনীর কাজ করেছে। রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ, একেবারেই সাদাসিধে একজন গৃহবধূ শেখ হাসিনা, শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যা এই পরিচয়টি নিয়ে আশির দশকের গোড়ায় বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসে সবার অনুরোধে যেদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন, সেদিন শুধু আওয়ামী লীগের মরা গাঙেই বান ডাকেনি, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শুষ্ক খালেও তার ঢেউ এসে লাগে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ নতুনভাবে সংগঠিত হয়েছে। পুরনো ও নতুন নেতৃত্বের সংমিশ্রণে আওয়ামী লীগ নতুন কাঠামো গ্রহণ করেছে। মূল কাঠামো বজায় রেখে আগের নীতিমালাও কিছু কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। রাজনীতিতে প্রায় অনভিজ্ঞ শেখ হাসিনা সামরিক শাসকদের ক্রমাগত বাধাদানের নীতির মুখে আওয়ামী লীগকে যেভাবে পুনর্গঠিত করেন, সাংগঠনিক শক্তির পরিচয় দেন, তা ছিল বিস্ময়কর।
দলের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও শুধু দলের বাইরে থেকে নয়, ভেতর থেকেও তাকে ভয়ঙ্কর সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। দলের ভেতরে তার পিতৃবন্ধু ও সহকর্মীদের অনেকে বৈরাম খাঁ সেজে কৌশলে হাসিনাকে দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে নিজেরা নেতা হতে চেয়েছেন। হাসিনার সাহস, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও রাজনৈতিক কৌশলের কাছে তারা একে একে পরাজিত হয়েছেন। এই পরাজিত বৈরাম খাঁদের মধ্যে আš—র্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিরাও আছেন। সম্রাট আকবর তার পিতৃবন্ধু ও অভিভাবক বৈরাম খাঁকে কৌশলে গুপ্তঘাতক দিয়ে হত্যা করিয়েছিলেন। হাসিনা তার ভুয়া অভিভাবক যারা সেজেছিলেন তাদের গুপ্তহত্যার শিকার করেননি; রাজনীতির প্রকাশ্য যুদ্ধের মাঠেই তাদের সব চক্রাš— ব্যর্থ করে দিয়েছেন। তারা সবাই এখন হারাধনের দশটি ছেলের একেক ছেলে।
বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা অসাধারণ সাহস ও সাফল্যের প্রমাণ দিয়েছেন। ¯ৈ^রাচারবিরোধী আন্দোলনে তার গুলির মুখে দাঁড়ানো ছাড়াও কোন কোন প্রবীণ নেতার মতো মাঠ ছেড়ে পলায়ন না করার নীতি তাকে দলীয় নেত্রী থেকে জননেত্রীতে রূপাš—র করেছে। ’৯১ সালের নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে তার দল পরাজিত হলেও তার দৃঢ়তা ও দাবির মুখে জয়ী বিএনপিকে দেশকে সংসদীয় প্রথায় ফিরিয়ে নিতে রাজি হতে হয়। এদিক থেকে বলা যায়, বাংলাদেশে প্রকৃত সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগই। অবশ্যই আওয়ামী লীগের এই সাফল্যের পেছনে দেশের ছোটবড় বাম ও গণতান্ত্রিক দলগুলোরও সমর্থন ছিল।
সামরিক ছাউনিতে জš§ নেয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রধান দল বিএনপির মধ্যে সব সময়ই মুসলিম লীগের মতো একটি ¯ৈ^রাচারী দলে পরিণত হওয়ার প্রবণতা ছিল। গত শতকের কুড়ি ও ত্রিশের দশকে ইউরোপের জার্মানি ও ইতালিতে ফ্যাসিবাদী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়ে ¶মতায় গিয়ে ¯ৈ^রাচারী চেহারা ধারণ করেছিল। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে সামান্য আসনের ব্যবধানে সাধারণ নির্বাচনে জিতে ¶মতায় বসার পর বিএনপিও ¯ৈ^রাচারী মূর্তি ধারণ করতে যাচ্ছিল। সংসদের ভেতরে-বাইরে আন্দোলন ও লড়াই দ্বারা হাসিনা এই ¯ৈ^রাচারকে ঠেকিয়েছেন। বিএনপির জালিয়াতির উপনির্বাচন ও নির্বাচন দুই-ই ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
বিএনপি একটি নির্বাচিত সরকার হওয়া সত্তে¡ও ১৯৯৬ সালে গণআন্দোলনের মুখে তাকে ¶মতা ত্যাগ করতে হয়েছিল। এই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে গণআন্দোলন হয়, তার শক্তি ও ঐক্য ছিল অভ‚তপূর্ব। জনতার আন্দোলনে সরকারি কর্মচারীরাও এসে যোগ দিয়েছিল। বিএনপির ¶মতা লাভের পর থেকেই যারা বলতে শুর“ করেছিলেন, আওয়ামী লীগ একটি আনইলেকটেবল পার্টি, আর কোন দিন নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে না, তাদের মুখে ছাই দিয়ে ১৯৯৬ সালেই শেখ হাসিনা নির্বাচনে জয়ী হয়ে দীর্ঘ একুশ বছর পর আবার আওয়ামী লীগকে ¶মতায় ফিরিয়ে আনেন। আওয়ামী লীগের অনেক প্রবীণ নেতাই যখন মৃত, নিষ্ক্রিয় অথবা দলত্যাগী, ড. কামাল হোসেনের মতো নেতাও যখন হাসিনার সঙ্গে নেই, তখন বলতে গেলে প্রায় তার একক নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার নির্বাচনে জয়ী হবে এবং ¶মতায় ফিরবেÑ এটা ছিল প্রায় অবিশ্বাস্য ঘটনা। 
নির্বাচন-জয় এবং ¶মতায় বসার পরও সরকার-পরিচালনা শেখ হাসিনার জন্য একটি সহজ ব্যাপার ছিল না। সম্মিলিত প্রতিপ¶ের চাপ ও চক্রাšে—র মোকাবেলায় তাকে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করতে হয় এবং বিভক্ত জাসদের একজন মুজিববিরোধী নেতা আ স ম আবদুর রবকেও মন্ত্রিসভায় গ্রহণ করতে হয়। এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গেও মিতালি করতে হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকেই বাংলাদেশে সিভিল-মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির একটি শক্তিশালী এ·িস গড়ে ওঠে। এটা ছিল বহুকাল পর্যš— প্রচÊভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী। প্রশাসন যখন এই অপশক্তির কবলে এবং প্রায় বিপরীতমুুখী সদস্যদের দ্বারা গঠিত, তখন এক ধরনের কোয়ালিশনের প্রধান পদে বসে হাসিনার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাওয়া ছিল এক অসম্ভব ব্যাপার। তবু শেখ হাসিনা যতটা সম্ভব এগিয়ে গেছেন। এটা ছিল তার জন্য এক অচিš—নীয় ব্যাপার। ব্রিটেনেও কনজারভেটিভ এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট এই দুটি বিপরীতমুখী আদর্শের দলের কোয়ালিশন সরকারের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন মাত্র দেড় দুই বছরেই হিমশিম খাচ্ছেন এবং তার সরকারের জনসমর্থন প্রায় তলানিতে এসে পৌঁছেছে। সেখানে শেখ হাসিনার মতো একজন নেত্রীর প¶ে তার প্রথম দফার অনভিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে জাসদ (রব) এবং জাতীয় পার্টির মতো দলের সঙ্গে ঐক্য বজায় রেখে পুরো মেয়াদে সরকারের অ¯ি—ত্ব টিকিয়ে রাখা এবং সেক্যুলারিজম ও গণতন্ত্রের পথে দেশকে যতটা সম্ভব ফিরিয়ে আনা কম বড় কৃতিত্বের কথা নয়। এই কৃতিত্বকে যারা খাটো করে দেখতে চান, তারা জ্ঞানপাপী।
প্রথম দফায় ¶মতায় বসেই শেখ হাসিনা প্রথম যে দুটি কাজ করেন, তা ছিল অনেকের কাছে শুধু সাহসী নয়, একজন প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক নেতার কাজ। তিনি বিএনপির মতো রাষ্ট্রপতির পদে ক্রীড়নক ও রাজাকার না বসিয়ে, এমনকি দলীয় লোককেও মনোনীত না করে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের মতো তখনকার একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় নিরপে¶ ব্যক্তিত্বকে ওই পদে বসিয়ে দেশের মানুষের অভ‚তপূর্ব সমর্থন লাভ করেছিলেন। শুধু রাষ্ট্রপতি পদে নয়, মন্ত্রিসভার সদস্যপদেও তিনি এবারের মতো অনভিজ্ঞ, জ্বি হুজুর না খুঁজে যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি খুঁজেছেন। শাহ মোহাম্মদ কিবরিয়ার মতো সাবেক যোগ্য ব্যুরোক্র্যাটকে অর্থমন্ত্রী পদে নিয়োগ তার প্রমাণ।
¶মতায় বসেই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতাদের ঘাতকদের গ্রেফতার ও বিচারের ব্যবস্থা শেখ হাসিনার একটি অসম সাহসী কাজ। এ কাজটি করতে গিয়ে তিনি তার নিজের জীবনের নিরাপত্তা ও তার সরকারের অ¯ি—ত্বকে এক বিরাট ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। এ ¶েত্রেও তিনি প্রতিশোধস্পৃহার পরিচয় দেননি। বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচারের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন না করে এবং তড়িঘড়ি তাদের শা¯ি— না দিয়ে তিনি দেশের সাধারণ বিচারব্যবস্থায় প্রকাশ্য বিচারের ব্যবস্থা করেছিলেন।
আজ এ কথা ¯^ীকার করতে আমার দ্বিধা নেই, প্রথম দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা যে প্রজ্ঞা, সাহস এবং দলপ্রেমের ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেমের পরিচয় দেখাতে পেরেছেন, দ্বিতীয় দফায় ¶মতায় এসে বলতে গেলে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে তা দেখাতে পারেননি। প্রথম দফার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরাট পার্থক্য। এই পার্থক্য বিচার করলেই দেখা যাবে শেখ হাসিনা ছাড়া যেমন আওয়ামী লীগের ঐক্য ও অ¯ি—ত্ব র¶া পেত না এবং তিনি এখনও দলটির ঐক্য ও শক্তির উৎস, তেমনি বর্তমানে দলটির যে বেহাল অবস্থা এবং আওয়ামী সরকারও যে ক্রমেই তার জনপ্রিয়তা ও শক্তি হারাচ্ছে, তারও মূল কারণ শেখ হাসিনা অর্থাৎ তিনি আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্বলতারও মূল উৎস।
আগেই বলেছি, গৃহবধূ শেখ হাসিনা সাহসের সঙ্গে রাজনীতিতে এগিয়ে এসে আওয়ামী লীগের হাল না ধরলে হয়তো দলটির অ¯ি—ত্ব থাকত না। কিন্তু আজ আবার তার একক নেতৃত্ব ও সিদ্ধাš— দল ও দলীয় সরকারের জন্য শক্তির বদলে দুর্বলতা ও অনৈক্যের ফাটল সৃষ্টি করে চলেছে। অথচ শেখ হাসিনার দুই দফার সরকারের সাফল্য অনেক। প্রথম দফায় ঐতিহাসিক পার্বত্য শাšি— চুক্তি, গঙ্গার পানির হিস্যা আদায়ে সাফল্য, পররাষ্ট্রনীতির ¶েত্রে মার্কিন বৈরিতা দূর করা, চীনের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং দ্বিতীয় দফায় মৌলবাদী সন্ত্রাস দমন ও ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা র¶ায় সম্ভবপর ভ‚মিকা গ্রহণ, শি¶া ও কৃষি ¶েত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প­াস পয়েন্ট। তার জীবনের ওপর ছোট-বড় যত হামলা হয়েছে (গ্রেনেড হামলাসহ) তার একটিও বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্য কোন নেতার ওপর হলে তারা হয়তো রাজনীতি থেকেই সরে দাঁড়াতেন। শেখ হাসিনা সরে দাঁড়াননি। এই সাহসই তার শক্তির উৎস।
কিন্তু তার দুর্বলতার উৎসগুলো কী? যা আজ তার দলের এবং সরকারেরও দুর্বলতা এবং সম্ভাব্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে সম্পর্কেও সিঙ্গাপুরের চন্দ্রমোহন বাবুর সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। (শেষাংশ আগামী সোমবার)
লন্ডন, ২৭ মে রোববার ।। ২০১২।।

শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

ভারতীয় গণতন্ত্রে ফাটল এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর বিপদাশঙ্কা (৪)



 আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী  
ভারতে গণতন্ত্রের পতন হয়েছে একথা বলা ঠিক হবে না। আমার বলার কথা, দেশটির কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব দুর্বল হতে হতে আজ এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যাকে কুড়ির ও ত্রিশের দশকের  জার্মানী ও ইতালির দুর্বল গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ফ্যাসিবাদের অভ্যুত্থানে ইউরোপে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন ঘটে। ভারতে গণতন্ত্র দুর্বল হলেও সে বর্তমানের ঘাত-প্রতিঘাত কাটিয়ে উঠে আবার শক্তিশালী হবে, এই প্রত্যাশা আমরা এখনো করি। কিন্তু ভারতে যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সত্যি অচল হয়ে পড়ে তাহলে ‘হিন্দুত্ববাদের’ আড়ালে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ অথবা প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্রের আঞ্চলিকতাবাদ মাথা তুলতে পারে এবং শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নয়, ভারতীয় গণতন্ত্রের ঐক্য ও সংহতিকেও বিপন্ন করে তুলতে পারে। ইউরোপের বলকানাইজেশনের প্রক্রিয়াও অন্য কোনো ধাঁচে ভারতেও শুরু হতে পারে।
এর একটি আলামত গুজরাটে সংখ্যালঘু হত্যার হোতা, নরপশু নরেন মোদীকে ‘উন্নয়নের প্রতীক’ আখ্যা দিয়ে তাকে ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খাড়া করার চেষ্টা। ভারতের বিগ মিডিয়ার একটা বড় অংশ একাজে তত্পর। পিছনে মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতাও রয়েছে। গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে হাজার হাজার সংখ্যালঘু হত্যার জন্য (অনেকটা গণহত্যার সামিল) নরেন মোদী নিজ দেশে অভিযুক্ত এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধের জন্য যে লোকটিকে এই কিছুদিন আগেও আমেরিকায় যেতে মার্কিন সরকার ভিসা দেয়নি, সেই নরেন মোদীকেই ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সবচাইতে যোগ্য লোক আখ্যা দিয়ে মার্কিন পত্র-পত্রিকায় সম্প্রতি প্রচারণার ঝড় তোলা হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিন নরেন মোদীর ছবি কভারে ছেপে তাকে নিয়ে কভার স্টোরি করেছে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস-নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও মার্কিন ম্যাগাজিনের কভারে উঠে এসেছেন এবং তিনি কভার স্টোরি হয়েছেন। একশ্রেণীর মার্কিন মিডিয়ার কাছে মমতা এখন ভারতের রাইজিং স্টার। অনেক ভারতীয় পলিটিক্যাল অবজার্ভারও মনে করেন, মমতার দৃষ্টি এখন দিল্লির মসনদের দিকে। দিল্লির বর্তমান কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে কার্যত অস্বীকার করে তিনি এখন আঞ্চলিক কর্তৃত্বের খেলা খেলছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত ও ছিটমহল সমস্যা, তিস্তার পানি ও টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প ইত্যাদি নিয়ে তিনি দিল্লির ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে বিপজ্জনক আঞ্চলিকতার খেলা খেলে সস্তা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তার পেছনে ব্যুরোক্রেসি, বিগ বিজনেস ও বিগ মিডিয়ার একটা বড় অংশ চতুর সমর্থন জুগিয়ে চলেছে বলে অনেকের ধারণা।
মমতা ব্যানার্জি এখন পর্যন্ত ভারতের একটি মাত্র রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তার তৃণমূল কংগ্রেসের তেমন কোনো অস্তিত্ব ও প্রভাব নেই। তা সত্ত্বেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বেইজিং থেকে ছুটে এসে ঢাকা হয়ে একেবারে কলকাতা ছুটলেন মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করতে, এই অভাবনীয় ঘটনা কি ইঙ্গিত দেয়? একটি ইঙ্গিতই কি দেয় না যে, মমতা ব্যানার্জির পেছনে কেবল দেশি নয়, বিদেশি শক্তিশালী খুঁটির জোরও আছে।
ভারতে কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতীক যে আর কংগ্রেস দল নয়, তার প্রমাণ মিলেছে এবার কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফলে। রাহুল গান্ধীর পারিবারিক ক্যারিশমা এবার কংগ্রেসের নির্বাচন জেতায় কাজ দেয়নি। অর্থাত্ গান্ধী-নেহেরু নামের তাবিজ ধারণ করে কংগ্রেস ভবিষ্যতে লাভবান হবে না, তারই আভাস পাওয়া গেছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল শক্তিশালী হচ্ছে। কংগ্রেস এরকম কিছু আঞ্চলিক দলের সমর্থনের উপর ক্ষমতায় টিকে আছে।
মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস এরকম একটি আঞ্চলিক দল। কংগ্রেস দল মার্কিন মৈত্রীর লোভে বামফ্রন্টের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করে তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়ার পর এখন মমতাসহ কিছু আঞ্চলিক দলের সমর্থনের উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে। আঞ্চলিকতা মাথা তুলছে। এই আঞ্চলিকতা সকল সময় গণতন্ত্রের সপক্ষশক্তি নয়। ভারতের গণতন্ত্র তাই দু’দিক থেকে আক্রান্ত। একদিকে হিন্দুত্ববাদের স্লোগানের আড়ালে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের এবং অন্যদিকে আঞ্চলিক স্বার্থের দোহাই পেড়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন গণতন্ত্র বিরোধী শক্তির উত্থান। যদিও তাদের গায়ে গণতন্ত্রের নামাবলি চাপানো। দিল্লীর সিংহাসনে মনমোহন সিংয়ের অবস্থা এখন অনেকটাই শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহের মতো। যদিও তার হাতে পরমাণু মিশাইল আছে এবং গলায় মার্কিন পরমাণু সহযোগিতা চুক্তির মালা ঝোলানো রয়েছে। আমাদের মনে রাখা দরকার, সামরিক শক্তিতে আমেরিকার সঙ্গে সমকক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন টিকতে পারেনি। কারণ, তার অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিলো।
ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য বিপদের সূচনা করে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী নিজেই। তার ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর তবু রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞান ছিলো, রাজনীতির চাতুর্য্য জানা ছিলো। রাজীব গান্ধী ছিলেন সম্পূর্ণ রাজনীতি-বিমুখ। বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ গ্রহণের আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন পেশায় বিমানের পাইলট। ভারতের মতো বিশাল দেশকে নেতৃত্বদানের মতো অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা তিনি কখনো অর্জন করেননি। যখন অর্জন করেন, তখন তাকে হত্যা করা হয়। ইন্দিরা গান্ধী অত্যন্ত দূরদর্শী রাজনীতিক হওয়া সত্ত্বেও পরিবারতন্ত্রের স্বার্থ দেখতে গিয়ে ভারতীয় গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য যোগ্য ও অভিজ্ঞ উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করে যাননি।
কংগ্রেস নেতৃত্বে এরকম যোগ্য ও অভিজ্ঞ উত্তরাধিকারী হওয়ার মতো নেতা তখন বহু ছিলেন; কিন্তু পরিবারতন্ত্র যেমন ভারতের কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য ও শক্তিকে এক সময় ধরে রেখেছে, পরে তারই অদক্ষতা ও অনভিজ্ঞতার জন্য তেমনি সেই পরিবারতন্ত্র ভারতীয় গণতন্ত্রকে ক্রমশ দুর্বল হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। শক্তিশালী বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোও নিজেদের মধ্যে তাত্ত্বিক বিরোধের জন্য ভারতীয় গণতন্ত্রে কংগ্রেসের বিকল্প সর্বভারতীয় দ্বিতীয় দল হয়ে উঠতে পারেনি। বরং দ্বিতীয় সর্বভারতীয় দল হয়ে ওঠার জন্য হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগটি সৃষ্টি করেছে কংগ্রেসের দুর্বল নেতৃত্ব এবং সেই নেতৃত্বের নীতিহীনতা।
রাজীব হত্যার পর এ পর্যন্ত কংগ্রেসে আর কোনো সবল নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর আবির্ভাব হয়নি। নরসীমা রাও সর্বভারতীয় নেতা হওয়ার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন না। মনমোহনসিংয়ের তো সেই যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দিল্লির কোনো কোনো সংবাদপত্র তাকে আখ্যা দিয়েছে, রাহুল গান্ধীর প্রক্সি প্রধানমন্ত্রী। অর্থাত্ যদিও তিনি ভোটদাতাদের ভোটে এবার প্রধানমন্ত্রী, আসলে রাহুল গান্ধীর প্রতিনিধি। তিনি নিজেই বলেছেন, রাহুল চাইলেই তিনি তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেবেন। প্রণব মুখার্জি তো আগে ভাগেই কর্তাভজা গীত গেয়েছেন; বলেছেন, ‘আমাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী রাহুল গান্ধী’; কিন্তু ভারতের কয়েকটি রাজ্যের (রাহুলের নিজের উত্তর প্রদেশসহ) নির্বাচনের ফল এই সম্ভাবনাকে পোক্ত করেনি। বরং দুর্বল করে দিয়েছে। সম্ভাবনা বাড়ছে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর নরেন মোদীর, এমন কি তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
ওয়াশিংটন ভারতীয় গণতন্ত্রের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে। অবশ্য এই সুযোগ তারা খুঁজেছে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই। নেহেরুর নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ভূমিকার জন্য তারা ভারতকে পশ্চিমা শিবিরে ভেড়াতে পারেনি। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করে এবং পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে নানা বিরোধ উস্কে দিয়ে তারা ভারতকে কাবু করতে চেয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তি যতোই দুর্বল হয়েছে, ততোই এই কাবু করার কাজটি সফল করা সহজ হয়েছে। অতীতে চীন ও সোভিয়েট ইউনিয়নের বিরোধের সুযোগ আমেরিকা যেমন নিয়েছে, তেমনি বর্তমানে নিচ্ছে ভারত ও চীনের মধ্যে বিরোধের। হিন্দুত্ববাদী বিজেপির উত্থান, শিক বিদ্রোহ এবং আঞ্চলিক স্বার্থ কেন্দ্রিক দলগুলোর (যেমন মমতার তৃণমূল) শক্তি অর্জনেও আমেরিকার নেপথ্য মদদ রয়েছে বলে মার্কিন সূত্রেই খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এ সবেরই উদ্দেশ্য, ভারতের কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য ও শক্তিকে দুর্বল করা এবং মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য করা। বিজেপি ক্ষমতায় এসে নিজেদের দলীয় স্বার্থে এই কাজটি করে গেছে; পরবর্তীকালে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ক্ষমতায় এসে কংগ্রেস আরেক ধাপ এগিয়ে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু সহযোগিতার চুক্তির নামে কণ্ঠিবদলের পর্বটি শেষ করেছে। দিল্লির আশা, সে চীনের মতো মার্কিন সহযোগিতায় এশিয়ায় চীনের প্রতিযোগী সুপার পাওয়া হবে।
ভারত-আমেরিকার মৈত্রীর ফলাফল ইতিমধ্যেই উপমহাদেশের রাজনীতিতে দেখা দিতে শুরু করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। মনমোহন সরকার এখনো একদিকে আন্না হাজারে, অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জিকে সামলাতে ব্যস্ত। প্রতিবেশী দেশগুলোর বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে না। আঞ্চলিক দলগুলোর উপর কংগ্রেস সরকারের নির্ভরতা, শুধু ভারতীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রীয় শক্তিকেই দুর্বল করেনি, ডানপন্থী আঞ্চলিক দল ও দল বিশেষের কাছে তাকে নতজানু করে রেখেছে।
সবচেয়ে বিপদের খবর হলো, ভারতীয় সেনাবাহিনীর গণতান্ত্রিক আনুগত্যের যে অর্ধশতাব্দিরও বেশি সময়ের সুনাম, তাতে সন্দেহের তীর বিদ্ধ হয়েছে। মার্কিন প্রভাবের সেখানে অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং সামরিক বাহিনীতে এক ধরনের অস্থিরতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সাবেক মেজর জেনারেল কে. কে. গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতায় ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় (১৮ এপ্রিল বুধবার, ২০১২) এ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। যদিও তিনি বিষয়টি লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বিষয়টি যে লঘু নয় তা নিবন্ধটি পাঠ করলেই বোঝা যায়।
ভারতের সামরিক বাহিনী বেশির ভাগ রাশিয়ান অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। এতোদিন পর সেনা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এখন সরকারের কাছে প্রকাশ্যে দাবি জানাচ্ছেন, তাদের নতুন অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া হোক। নতুন অস্ত্র মানে আমেরিকার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনা। অস্ত্র ব্যবসায়ের মাধ্যমেই আমেরিকা অন্য দেশের রাজনীতিতেও প্রভাব ও কর্তৃত্ব বিস্তার করে। ভারতের সামরিক বহিনীতেও মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ের অনুপ্রবেশ দেশটির রাজনীতিতে কি অবাঞ্ছিত পরিবর্তন ঘটাবে সে সম্পর্কে অনেকেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করছেন।
কিছুদিন আগে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে আরেকটি ঘটনা বিরাট চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলো। ভারতীয় সামরিক বহিনীর দু’টি ইউনিট ১৫-১৬ জানুয়ারি তারিখে হঠাত্ কেন দিল্লি অভিমুখে যাত্রা করেছিলো তা নিয়ে ভারতীয় সংবাদপত্রে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। কেউ কেই এটাকে বলছেন,  রজ্জুতে সর্পভ্রম। কিন্তু সাপ যে প্রয়োজনে রজ্জুর ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে, বাংলাদেশের এক এগারোর ঘটনা কি তার প্রমাণ নয়? আমার কথা, ভারতীয় গণতন্ত্র এখন এক অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলছে। গণতন্ত্র প্রিয় প্রতিটি মানুষের কামনা ভারত এই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোক। নইলে তার প্রতিবেশী দেশগুলোতেও দুর্বল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে; দেশি বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল চক্রগুলোর ষড়যন্ত্রে সারা উপমহাদেশে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠবে। গত শতকের বিশের ও ত্রিশের দশকে জার্মানী ও ইতালিতে গণতন্ত্রের পতন ও  ফ্যাসীবাদের অভ্যুত্থানে সারা ইউরোপ বিপন্ন হয়েছে, সর্বত্র যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠেছিলো। ভারতে গণতন্ত্র বিপন্ন হলে সারা উপমহাদেশে প্রায় বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। ধর্মীয় অথবা অন্য ধরনের ফ্যাসিবাদ মাথা তুলবে। সেই আশঙ্কা সম্পর্কে সারা উপমহাদেশেই এখন সচেতনতা সৃষ্টি হওয়া দরকার। আমরা যেন আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মিউনিক চুক্তির মতো একটি ব্যর্থ চুক্তি সম্পাদনের আশায় বসে না থাকি। (সমাপ্ত)
লন্ডন, ২৬ মে শনিবার, ২০১২

ডা. আফ্রিদি ফেরেশতা না শয়তান?


আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
পাকিস্তানে শিশুদের মধ্যে পোলিও রোগের সংক্রমণ ব্যাপক। তার বিরুদ্ধে টিকাদান অভিযান একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। ডা. আফ্রিদির মাধ্যমে এই টিকাদান অভিযানকে কভার করে সিআইএর লাদেন হত্যা তৎপরতা চালিত হওয়ায় এই টিকাদান অভিযান শুধু ব্যাহত হওয়া নয়, অভিযানটি ক্রেডিবিলিটি হারিয়েছে। গত দু'বছরে পাকিস্তানে দু'লাখ শিশুকে পোলিওর টিকাদান সম্ভব হয়নি। গত মার্চ মাসে বিশ্বের দু'শ সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান সিআইএর ডিরেক্টর ডেভিড পেট্রুজের কাছে যুক্তভাবে চিঠি লিখে তাদের এই অবৈধ, মানবতাবিরোধী কৌশলের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন


আমার আজকের লেখার শিরোনামটি সম্পর্কে সহৃদয় পাঠকদের আগেই জানিয়ে রাখি, শিরোনামটি আমার নয়। আমি ইংরেজি থেকে বাংলা তরজমায় একটু স্বাধীনতা গ্রহণ করেছি মাত্র। গত বৃহস্পতিবারের (২৪ মে) গার্ডিয়ান কাগজে পাকিস্তানে মার্কিন সিআইএর স্পাই হিসেবে ধৃত ও দণ্ডিত পাকিস্তানি ডাক্তার ডা. শাকিল আফ্রিদি সম্পর্কে ইসলামাবাদ থেকে যে রিপোর্টটি পাঠানো হয়েছে তার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে হিরো অর ভিলেন? আমার লেখায় সেই শিরোনামটিকেই আমি বাংলা করেছি_ফেরেশতা না শয়তান?
পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ ভাবছে, ডা. আফ্রিদি একজন রাষ্ট্রদ্রোহী শয়তান। আর আমেরিকা চাচ্ছে তাকে একজন ফেরেশতা প্রমাণ করতে। তাদের চোখে আফ্রিদি একজন হিরো। কারণ, তিনি সিআইএর স্পাই হিসেবে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করা এবং তাকে হত্যার ব্যাপারে আমেরিকাকে সাহায্য জুগিয়েছেন। লাদেনকে তার এবোটাবাদের গোপন আস্তানায় ইউএসএ নেভি সিলস হানা দিয়ে হত্যা করে। এ ব্যাপারে পাকিস্তানকে কিছু জানানো হয়নি এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এই সামরিক হামলায় পাকিস্তানের অনুমতিও গ্রহণ করা হয়নি। ফলে পাক-মার্কিন সম্পর্কে বিরাট ফাটল ধরে, যে ফাটল এখনও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। বরং দিন দিন বাড়ছে।
পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষ প্রথমে বুঝতেই পারেননি, তাদের অগোচরে আমেরিকা এত বড় সামরিক হামলা কী করে চালাল? পরে পাকিস্তানে ইনটেলিজেন্স রহস্যটি উদ্ঘাটন করে। ডা. শাকিল আফ্রিদি ছিলেন পাকিস্তানে একজন সরকারি হেলথ অফিসার। আফগান সীমান্ত সংলগ্ন পাকিস্তানের গ্রামগুলোতে শিশুদের পোলিও টিকা দেওয়ার অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন।
লাদেনকে খুঁজে বের করার কাজে মার্কিন সিআইএ আফ্রিদিকে পায়। সিআইএর আনুকূল্যে আফ্রিদি একটি ভুয়া (ইড়মঁং) হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনেশন অভিযান শুরু করে, যার আসল উদ্দেশ্য ছিল লাদেন পরিবার বা লাদেনের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের ডিএনএ টেস্টের জন্য রক্ত সংগ্রহ করা এবং লাদেনকে খুঁজে বের করার কাজে তা ব্যবহার করা। আফ্রিদি তাতে সফল হন। আফ্রিদি তার এই কাজে ১৭ জন নার্স ও হেলথ ওয়ার্কার নিযুক্ত করেছিলেন।
এই হেলথ ওয়ার্কাররা টিকাদানের নামে রক্ত সংগ্রহের জন্য লাদেনের ব্যক্তিগত কম্পাউন্ডে ঢুকতে না পারলেও কম্পাউন্ডের ভেতরের একজনের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। এই মোবাইল ফোনই লাদেনকে খোঁজার ব্যাপারে সহায়তা জোগায়। লাদেন হত্যার পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ ডা. আফ্রিদি এবং তার ভুয়া টিকাদান অভিযান কেন্দ্রের সন্ধান পায় এবং তাকে পলায়নের আগেই গ্রেফতার করা হয়। ৪৮ বছর বয়সী এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ব্রিটিশ আমলের এক পুরনো আইনে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে গুপ্তচরগিরি করার দায়ে তেত্রিশ বছরের জন্য কারাদণ্ড এবং ২ হাজার ২২১ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। তার ১৭ জন হেলথ ওয়ার্কার ও নার্সকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এই দণ্ড ঘোষিত হওয়ার পর পাকিস্তানে ও আমেরিকায় তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছে। আমেরিকান নেতারা বলছেন, ডা. আফ্রিদি একজন হিরো। তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়, আল কায়দার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তাকে পুরস্কৃত করা উচিত। আমেরিকার প্রভাবশালী কংগ্রেস সদস্য ডানা রোহয়া বেচার কংগ্রেসে প্রস্তাব এনেছেন, আফ্রিদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব দান করা হোক।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার, সাধারণত কোনো দেশের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার গুপ্তচর দেশের বাইরে ধরা পড়লে গোয়েন্দা সংস্থাটি তাকে নিজেদের লোক বলে স্বীকার করে না। কিন্তু আফ্রিদির বেলায় আমেরিকা সেই নিয়ম লঙ্ঘন করে তাকে নিজেদের লোক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। পাকিস্তান যাতে আফ্রিদিকে শাস্তি না দেয়, সে জন্য শীর্ষস্থানীয় মার্কিন নেতারা প্রকাশ্যে দেনদরবার করেছেন। এমনকি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিয়ন পেনেট্টা ঘোষণা করেন, 'লাদেন হত্যা অভিযানে আফ্রিদির দেওয়া গোপন তথ্য বিরাটভাবে সাহায্য জুগিয়েছে। আফ্রিদি এমন কোনো কাজ করেননি, যা পাকিস্তানের স্বার্থহানি করেছে।' পেনেট্টার এই বক্তব্য আফ্রিদির বিচারে তার পক্ষে যায়নি, বিপক্ষে গিয়েছে।
আমেরিকা যেখানে তাদের একজন পাকিস্তানি গুপ্তচরকে হিরো সাজাবার চেষ্টা করছে, পাকিস্তান সেখানে তাকে ভিলেন হিসেবে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়ে দীর্ঘ ৩৩ বছরের জন্য জেলে পাঠিয়েছে। আমেরিকার যুক্তির জবাবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বড় বড় নীতিকথা বলা আমেরিকার মুখে সাজে না। জোনাথন পোলার্ড নামে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক ব্যক্তিকে কি ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরগিরির জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি? ইসরায়েল তো আমেরিকার মিত্র রাষ্ট্র। তাহলে মিত্র রাষ্ট্রের হয়ে গুপ্তচরগিরির জন্য পোলার্ডকে কেন জেলে যেতে হয়েছিল?
এই প্রশ্নের জবাব আমেরিকার কাছে নেই। তারা দেখাতে চাইছেন, পাকিস্তান আর আল কায়দা এক ব্যাপার নয়। ডা. আফ্রিদি আল কায়দার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়। গত বৃহস্পতিবার (২৪ মে) পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জর্জ লিটলও কথাটা বলেছেন। জর্জ লিটলকে কেউ জিজ্ঞাসা করেনি, আল কায়দার বিরুদ্ধে তো প্রকাশ্য ভূমিকা রয়েছে পাকিস্তানেরও। পাকিস্তানও লাদেনকে খোঁজার কাজে তৎপরতা দেখাচ্ছিল। তাহলে ডা. আফ্রিদি কেন তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজটি করলেন না? অথবা তিনি যখন লাদেনের খোঁজ পেলেনই, তখন আগে তা নিজের দেশের কর্তৃপক্ষকে জানালেন না? না জানিয়ে নিজ দেশে তিনি কেন একটি পরাশক্তির গোপন এবং ভয়াবহ হামলার ব্যবস্থা করে দিলেন? এই হামলায় লাদেন নিহত হয়েছেন বটে, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কি চূড়ান্তভাবে লঙ্ঘিত হয়নি? আর যে কোনো কারণেই হোক, যে ব্যক্তি নিজের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের কাজে একটি বাইরের শক্তিকে সাহায্য জুগিয়েছে সে কি ভয়ঙ্কর দেশদ্রোহী নয়? পাকিস্তান তাকে সাজা দিয়ে কি অন্যায় করেছে?
সবচেয়ে বড় কথা, আমেরিকা তার একজনমাত্র শত্রুকে (আমেরিকারই সৃষ্ট রাজনৈতিক শত্রু) খুঁজতে গিয়ে যেভাবে আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম-রীতি, সেবা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে সকল মানবতাবাদী সংস্থা, সংস্থার কার্যক্রমকে তাদের প্রতিটি আগ্রাসনের কভার হিসেবে ব্যবহার করছে, তাতে বিশ্বময় এই সংস্থাগুলোর প্রতিবাদ ধ্বনি উত্থিত হয়েছে। তারা বলছেন, মার্কিন অবৈধ ও আগ্রাসী কার্যকলাপকে কভার দেওয়ার জন্য যদি এভাবে আন্তর্জাতিক সেবা ও মানবতাবাদী সংস্থাগুলোর কাজকর্মকে ব্যবহার করা হতে থাকে, তাহলে এই সংস্থা ও তাদের কার্যক্রম ক্রেডিবিলিটি হারাবে এবং বিশ্বে দুস্থ, পীড়িত, আর্তমানুষের সেবা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে।
পাকিস্তানে শিশুদের মধ্যে পোলিও রোগের সংক্রমণ ব্যাপক। তার বিরুদ্ধে টিকাদান অভিযান একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। ডা. আফ্রিদির মাধ্যমে এই টিকাদান অভিযানকে কভার করে সিআইএর লাদেন হত্যা তৎপরতা চালিত হওয়ায় এই টিকাদান অভিযান শুধু ব্যাহত হওয়া নয়, অভিযানটি ক্রেডিবিলিটি হারিয়েছে। গত দু'বছরে পাকিস্তানে দু'লাখ শিশুকে পোলিওর টিকাদান সম্ভব হয়নি। গত মার্চ মাসে বিশ্বের দু'শ সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান সিআইএর ডিরেক্টর ডেভিড পেট্রুজের কাছে যুক্তভাবে চিঠি লিখে তাদের এই অবৈধ, মানবতাবিরোধী কৌশলের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
কূটনৈতিক বা অন্যবিধ চাপ প্রয়োগে ডা. আফ্রিদির দণ্ড মওকুফ করা যাবে তা কেউ আশা করেন না। তাকে আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন ছাড়া আফ্রিদির মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। প্রেসিডেন্ট জারদারির ওপর চাপ প্রয়োগ করে ওয়াশিংটন কি তার কাছ থেকে আফ্রিদির জন্য প্রাণভিক্ষা আদায় করতে পারবে? অনেকে সন্দেহ করেন। জারদারি তার দেশের শক্তিশালী সামরিক কমান্ড ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থার চাপের বাইরে যেতে সহজে সাহসী হবেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা জারদারির ওপর ভয়ানক গোসা। সম্প্রতি শিকাগোতে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর কনফারেন্সের সময় জারদারি চেয়েছিলেন ওবামার সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক। ওবামা সাফ না বলে দিয়েছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে ন্যাটোর সাপ্লাই ট্রাক চলাচলের ব্যাপারে জারদারি সরকার যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তা এখনও প্রত্যাহারে রাজি হয়নি। ওয়াশিংটন রাজি নয়, গত সেপ্টেম্বর মাসে আফগান-সীমান্তে যে ২৪ জন পাকিস্তানি সৈন্য তারা হত্যা করেছে, সে জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে। এসব কারণে কেবল কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে সিআইএর এজেন্ট হিসেবে প্রমাণিত ডা. শাকিল আফ্রিদিকে আমেরিকা সহজেই মুক্ত করতে পারবে তা মনে হয় না। পাকিস্তানিদের চোখে তিনি একজন দেশদ্রোহী হিসেবেই বিবেচিত হবেন।
আমেরিকার পক্ষে একজন শত্রুকে বিনাশ করতে গিয়ে শত শত্রুর জন্ম দেওয়া এবং একটি মিত্র ও তাঁবেদার দেশকে একেবারে শত্রু দেশে পরিণত হওয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া এশিয়ায় ওবামার নতুন ডকট্রিন সফল হওয়ার কাজে কতটা সাহায্য জোগাবে তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে লাদেন হত্যা দ্বারা যেমন আল কায়দাকে পরাজিত করা বা আফগান যুদ্ধজয় সম্ভব হয়নি, তেমনি ড্রোন হামলা, সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেও এশিয়ায় ওবামা ডকট্রিন সফল করা যাবে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আমেরিকা যে মানবতাবিরোধী ভূমিকা অনুসরণ করছে, সেটাই তার সাফল্য লাভের আসল অন্তরায়।
লন্ডন, ২৫ মে শুক্রবার, ২০১২

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

বপিজ্জনক অচলাবস্থা থকেে মুক্ত হওয়ার পন্থা কী?




আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
বাংলাদশেে সরকার আরও র্হাডলাইনে গছে।ে বএিনপরি আটক নতোদরে সংখ্যা আরও বড়েছেে বলে খবর বরেয়িছে।ে সরকার হয়ত ভাবছ,ে ডাণ্ডা মরেে বরিোধী দলকে ঠাণ্ডা করে দয়িছে।ি অন্যদকিে বরিোধী দলরে আটক নতোরা জলেে বসে তাস পাশা খলে,ে আড্ডা দয়িে কাটালওে মনে মনে অথবা তাদরে সকলে মলিে কি সব নতুন ফন্দি আঁটছনে, তা কে বলব?ে র্অথাৎ রাজনতৈকি আবহাওয়ার এ নরিুত্তাপ অবস্থা দখেে বোঝার উপায় নইে অদূর-ভবষ্যিতে কী ঘটতে যাচ্ছ?ে এই শান্ত অবস্থা ঝড়রে আগরে র্পূবাভাস কি না কউে বলতে পারে না। 
আমার ধারণা, এখনই ঝড় না হোক, আকাশে কালো মঘেরে ঘনঘটা চলতইে থাকব।ে সরকার জনগণরে দনৈন্দনি সমস্যা সমাধানে একটার পর একটা র্ব্যথতা নয়িে খুঁড়য়িে খুঁড়য়িে হাঁটতে থাকব।ে অন্যদকিে বএিনপ-িজামায়াত আপাতত দু’একদনি আটক ও পলাতক অবস্থায় নষ্ক্রিয়ি থাকলওে সুযোগ পলেইে কচ্ছপরে মতো আবার মাথা বরে করবে এবং রাজপথে আন্দোলনরে নামে আবার ভাংচুররে খলো শুরু করব।ে র্দুভােগ বাড়বে জনগণরে জীবন।ে রাজনীততিে অচলাবস্থা চলতইে থাকব।ে 
এই অচলাবস্থা আগামী সাধারণ নর্বিাচন অনুষ্ঠানকে অনশ্চিতি করে তুলব।ে আর কোন কারণে যদি সকলরে কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নর্বিাচন না হয়, তাহলে আরও বড় অচলাবস্থা দখো দবেে এবং তার সুযোগে দশেে আবার অনশ্চিতি, অগণতান্ত্রকি ব্যবস্থা ফরিে আসতে পার।ে ঠকি এক-এগারো আবার হবে সে কথা আমি বলি না। কন্তিু রাজনতৈকি দলগুলোর দশে শাসনরে র্ব্যথতার ত্যক্তবরিক্ত জনগণরে অসন্তোষরে সুযোগ নয়িে বাংলাদশেে আমাদরে মুরব্বি দশেগুলো রাজনতৈকি অস্থরিতা দূর করার কাজে সাহায্য যোগানোর নামে একটি সভিলি ক্যুও ঘটাতে পার।ে 
আর এই সভিলি ক্যু ঘটানোর জন্য বাংলাদশেে একটি সভিলি সমাজ, তাদরে নরিপক্ষে মডিয়িা এবং তাদরে জাঁদরলে কলামস্টি ও বুদ্ধজিীবীরাও উন্মুখ হয়ে আছনে। আর বাংলাদশেে কারজাই ও তারকিরি ভূমকিা গ্রহণরে জন্য আগ্রহী ব্যক্তরিও অভাব নইে। ইতোমধ্যইে র্মাকনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলিারি ক্লনিটনরে ঢাকা সফররে সময় তার কাছে সুশীল সমাজরে আদৃত দু’জন নটেভি প্রন্সিকে ডকেে নয়িে তাদরে ইন্টারভউি গ্রহণ করা হয়ছে।ে তাদরে ছাড়াও আরও অনকে জাতীয় ও আর্ন্তজাতকি খ্যাতসিম্পন্ন ব্যক্তরিা আছনে, যারা কউে নর্বিাচনে বারবার দাঁড়য়িে পরাজতি হয়ছেনে, কউে রাজনতৈকি দল গঠন করতে গয়িে র্ব্যথ হয়ছেনে। তবু তাঁরা রাজনীতি আঁকড়ে আছনে। কারণ তাঁদরে পছেনে বদিশেী পৃষ্ঠপোষকতা এখনও আছে বলে তাঁরা ভাবনে। র্মাকনি রাষ্ট্রদূত মজনো সাহবেরে সম্প্রতি অনাবশ্যকভাবে বাংলাদশে ঘুরে বড়োনো তাদরে মনে হয়ত আশার সঞ্চার করছে।ে অনকেইে মনে মনে আঁচ করে ফলেছেনে র্মাকনি দূতরে এই ব্যাপক ট্যুররে পছেনে আসল উদ্দশ্যেটা কী? 
আমাদরে প্রধান দু’টি রাজনতৈকি দল যদি এখনই এসব বষিয়ে সর্তক ও সচতেন না হয় এবং কতপিয় বৃহত্তর জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্যে না পৌঁছে তাহলে শুধু দশেরে কপালে নয়, তাদরে কপালওে দুঃখ আছ।ে ক্ষমতার জন্য মারামারি করছে আওয়ামী লীগ ও বএিনপ।ি এমনও হতে পার,ে এই মারামারি আরও উস্কে দয়িে দশেে নরৈাজ্য সৃষ্টি দ্বারা দুই প্রধান দলকইে রাজনীতরি মঞ্চ থকেে সরে যতেে বাধ্য করে এমন অরাজনতৈকি ও অনর্বিাচতি ব্যক্তদিরে ক্ষমতায় আনা হব,ে যাঁরা দশেরে ভাগ্য ফরোনোর জন্য নয়, নজিদেরে ভাগ্য ফরোনো এবং বদিশেীদরে র্স্বাথ পূরণরে জন্য বদিশেীদরে র্সাটফিকিটে ও প্রশংসা নয়িে ক্ষমতায় বসবনে। 
না, এবার কোন মলিটিারি ক্যু হবে না। এবার আমাদরে মুরব্বরিা সুশীল সমাজ অথবা নটেভি প্রন্সিদরে মাঝ থকেইে বাংলাদশেরে একজন সভিলিয়িান ত্রাণর্কতা হয়ত খুঁজে বরে করবনে (অথবা ইতোমধ্যইে খুঁজে বরে করছেনে)। দশেে এমন পরস্থতিি সৃষ্টি করা হবে (ইতোমধ্যইে তা করা শুরু হয়ে গছে)ে যাতে দশেরে মানুষ প্রধান দু’টি দলকইে দায়ী মনে করবে এবং বদিশেীদরে নপেথ্য পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তায় একজন অসামরকি ত্রাণর্কতার আবর্ভিাবে স্বস্তরি নশ্বিাস ফলেব।ে এই ত্রাণর্কতা দশেরে এলটি শ্রণেীর বড় অংশ, তথাকথতি নরিপক্ষে মডিয়িা, সভিলি এবং মলিটিারি ব্যুরোক্রসেরি প্রভাবশালী অংশরে সর্মথন ও ব্যাকংি লাভ করবনে। 
আগইে বলে রাখ,ি এসব কথা আমার অনুমান। সঠকি নাও হতে পার।ে তবে আমার র্দীঘকালরে সাংবাদকি অভজ্ঞিতা বল,ে সঠকি হওয়ায় আশঙ্কাই বশে।ি যদি আমার এই অনুমান সঠকি হয়, তাহলে বাংলাদশেে মাইনাস টু থয়িোররি খলো আবার শুরু হব।ে তবে আগরে বাররে মতো ক্রুড্ পদ্ধততিে নয়, অত্যন্ত সূক্ষ্মভাব।ে ব্রটিনেওে আমরা কোন কোন সময় দখেছে,ি হঠাৎ কোন প্রধানমন্ত্রী র্পালামন্টেে তাঁর দলরে সংখ্যাগরষ্ঠিতা এবং তাঁর নতেৃত্ব অটুট থাকা সত্ত্বওে দলরে নতেৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রত্বি ছড়েে দয়িছেনে। যমেন দয়িছেলিনে সত্তররে দশকে ব্রটিশি লবোর দলীয় সরকাররে প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন। একবার র্চাচলিও দয়িছেলিনে। এর কারণ সর্ম্পকে নানা গুজব শোনা গছে।ে প্রকৃত কারণ কখনও প্রকাশ করা হয়ন।ি বাংলাদশেওে এভাবে নপেথ্যরে সূক্ষ্ম খলোয় রাজনতৈকি নতেৃত্ব বদলে যতেে পার।ে যদি হয় সটো জনগণরে ইচ্ছায় হবে না, হবে নপেথ্য শক্তরি ইচ্ছায়। তবে জনগণরে ইচ্ছা পূরণরে কথা ঢাকঢোল পটিয়িে প্রচার করা হব।ে 
যদি এভাবে বাংলাদশেরে রাজনীতি থকেে অচলাবস্থা দূর করা এবং তাকে স্বচ্ছ করার নামে একটি অনর্বিাচতি অসামরকি সরকার দশেটরি ঘাড়ে চাপয়িে দয়ো যায়, তাহলে বাংলাদশেরে জাতীয় র্স্বাথ কোনটাই রক্ষা পাবে না। সবই বদিশেী র্স্বাথে বকিয়িে দতিে হব।ে পান,ি গ্যাস, বদ্যিুত, নদীর পাড়, ছটিমহল, নৌবন্দর, ট্রানজটি, সামরকি ঘাঁট,ি সীমান্তে গুলি কোন ব্যাপারইে আমরেকিা ও ভারতরে যে চাপগুলোর কাছে আওয়ামী লীগ ও বএিনপি কোন সরকাররে পক্ষইে সর্ম্পূণ আত্মসর্মপণ করা সম্ভব হয়ন,ি আমাদরে জতীয় ঐক্যরে সব সম্ভাব্য এলটি সরকার জাতীয় র্স্বাথ পূরণরে ধুয়া তুলইে সইে চাপরে কাছে হাসি মুখে জাতীয় র্স্বাথ বকিয়িে দবে।ে আমাদরে সুশীল সমাজ, নরিপক্ষে মডিয়িা ধন্য ধন্য করব।ে বুদ্ধজিীবীদরে যে অংশটি এখন পানি গ্যাস নৌবন্দররে ট্রানজটিরে প্রশ্নে দবে না দবে না বলে উদ্বাহু নৃত্য করছ,ে রাজপথে তখন তাদরে টকিওি দখো যাবে না। 
বাংলাদশেরে সামনে এখন যড়ৎহং ড়ভ ফরষবসসধÑ উভয় সঙ্কট। যদি বাংলাদশেে বএিনপরি বভ্রিান্তকির ভূমকিার জন্য পাকস্তিানরে সামরকি সংস্থা আইএসআইয়রে একটি উগ্র ভগ্নাংশরে চক্রান্ত সফল হয়, তাহলে বাংলাদশে দ্রুত একটি আধা তালবোনী রাষ্ট্র হওয়ার দকিে এগয়িে যাব।ে পাকস্তিানরে ধ্বংসাত্মক পরস্থিতিি এখানওে দখো দতিে পার।ে আর আওয়ামী লীগরে দশে শাসনে র্ব্যথতার জন্য যদি বাংলাদশেকে আমরেকিা ও ভারতরে র্বতমান সামরকি ও র্অথনতৈকি চাপরে কাছে মাথা নোয়াতে হয় তাহলে বাংলাদশে এই নতুন অক্ষশক্তরি ক্লায়ন্টে স্টটেে পরণিত হব।ে আওয়ামী লীগ মাথা নোয়াতে না চাইলে কী র্ফমে আবার বাংলাদশেে রাজনতৈকি পরর্বিতন ঘটানোর চষ্টো হবে সে সর্ম্পকে আমার আশঙ্কার কথা আগইে বলছে।ি 
এই ভয়ানক আশঙ্কা কি এড়ানোর কোন পথ আছ?ে অনকেইে বলনে, আমরেকিা এখন একক সুপার পাওয়ার, ভারত এখন বাংলাদশেকে বষ্টেন করে থাকা সাব সুপার পাওয়ার। এদরে চাপরে কাছে বড় বড় রাষ্ট্র মাথা নোয়ায়, বাংলাদশেে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, তারা মাথা না নুইয়ে কী করব?ে এই প্রশ্নরে জবাবে কউিবার ফদিলে ক্যাস্ট্রোর একটি উক্তি স্মরণ করতে হয়। তনিি বলছেলিনে, কউিবার উপকূল থকেে মাত্র নব্বই মাইল দূরে অবস্থতি বশ্বিরে এক সুপার পাওয়ার আমরেকিার চাপরে মোকাবলো আমরা অবশ্যই করতে পারব না। কছিু কছিু ছাড় আমাদরে দতিইে হব।ে কন্তিু দখেতে হবে আমাদরে মৌলকি জাতীয় র্স্বাথ কোন্গুলো? সগেুলো চহ্নিতি করে সগেুলো রক্ষায় অটুট জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হব।ে কবেল সরকার বা ক্ষমতাসীন দল একা এই চ্যালঞ্জেরে মোকাবলো করতে পারবে না। চাই নñিদ্রি জাতীয় ঐক্য। 
ক্যাস্ট্রোর এই উক্তটিি আজ বাংলাদশেরে জন্যও সত্য। উপমহাদশেে ভারতরে মত্রৈী অবশ্যই আমাদরে কাম্য। কন্তিু অধুনা দল্লিী-ওয়াশংিটন যে নতুন এবং অত্যন্ত শক্তশিালী অক্ষশক্তি তরৈি হয়ছে,ে তার অপ্রতরিোধ্য চাপ থকেে আমাদরে মৌলকি জাতীয় র্স্বাথগুলো রক্ষার জন্য সগেুলো চহ্নিতি হওয়া দরকার এবং সগেুলো রক্ষায় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে দশেরে প্রধান দু’টি রাজনতৈকি দলরে মধ্যে আগে সমঝোতা হওয়া দরকার। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গণতান্ত্রকি পন্থায় লড়াই করুক। কন্তিু দশে ও জাতকিে রক্ষার জন্য মৌলকি জাতীয় র্স্বাথ ও দশেরে র্সাবভৌমত্ব রক্ষার উদ্দশ্যেে জাতীয় সমঝোতা গড়ে তুলুক। 
বাংলাদশেরে এই জাতীয় র্স্বাথরে কয়কেটরি কথা এখানে উল্লখে করতে পার।ি 
এক. সীমান্তরে নরিাপত্তা, সীমান্ত চহ্নিতিকরণ এবং বএিসএফরে প্রাত্যহকি হত্যাকা- বন্ধ করা। 
দুই. ছটিমহল ফরেত দয়ো সর্ম্পকে চুক্তরি অনতবিলিম্বে বাস্তবায়ন। 
তনি. সমুদ্রসীমা নর্ধিারণ, বঙ্গোপসাগরে নতুন জগেে ওঠা চররে ওপর বাংলাদশেরে স্বাভাবকি মালকিানা অস্বীকার না করা এবং ভারত র্কতৃক তা দখল না করা। 
চার. চুক্তি মোতাবকে ফারাক্কার পানরি হস্যিা নয়িমতি দয়ো এবং অবলিম্বে তস্তিার পানি বণ্টন এবং টপিাইমুখ বাঁধ প্রকল্প সর্ম্পকে ভারত র্কতৃক বাংলাদশেরে জন্য ক্ষতকির পদক্ষপে না নয়ো। 
পাঁচ. ট্রানজটি যাতে বাংলাদশেরে জন্য ক্ষতকির না হয় এবং পান,ি গ্যাস, কন্টনোর র্পোট সর্ম্পকে সদ্ধিান্ত গ্রহণে বাংলাদশেরে অধকিার অক্ষুণœ থাকে এবং যনে একতরফা ব্যবস্থা চাপয়িে না দয়ো হয়, তা নশ্চিতি করা। 
ছয়. ভারতরে সঙ্গে বাংলাদশেরে বাণজ্যিকি অসমতা দূর করা এবং আমরেকিায় বাংলাদশেরে শুল্কমুক্ত পণ্য পাঠানোর সুবধিা বাড়ানোর প্রতশ্রিুতি র্পূণ করা। 
সাত. আফগানস্তিানে র্মাকনি সামরকি র্কাযক্রমে ওয়াশংিটন র্কতৃক বাংলাদশেকে জড়ানোর চষ্টো থকেে বরিত থাকা। 
আট. চীনরে সঙ্গে বাংলাদশেরে স্বাভাবকি বাণজ্যি সর্ম্পক ও সহযোগতিা বাড়ানোর ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি না করা। 
নয়. বাংলাদশেে ভারতরে হন্দিি ভাষার আধপিত্যবাদী আগ্রাসন বন্ধ করা। 
দশ. ভসিা-পাসর্পোট ইত্যাদি নয়িে বাংলাদশেীদরে হয়রানি করার নীতি পরর্বিতন করা... ইত্যাদ।ি 
তালকিাটি আরও বড় করা যায়। তা না করইে বলছ,ি এগুলো বাংলাদশেরে মৌলকি জাতীয় র্স্বাথ। এই বষিয়গুলোর ব্যাপারে নশ্চিয়ই দশেরে দুটি প্রধান রাজনতৈকি দলরে মধ্যে মতর্পাথক্য নইে। সুতরাং এক্ষত্রেে জাতীয় র্স্বাথ রক্ষার ঐক্যবদ্ধ প্রচষ্টো দ্বারা দশেরে স্বাধীনতা ও র্সাবভৌমত্ব যাতে ক্ষুণœ না হয় সে প্রয়াস চালাতে বাধা কোথায়? দশেরে প্রধান দু’টি রাজনতৈকি দলই জান,ে নর্বিাচতি হয়ে তারা যে কোন দলই ক্ষমতায় বসুক, এককভাবে তারা বাংলাদশেরে মাটতিে আইএসআই ও ‘র’-এর দৌরাত্ম্য এবং হলিার-িপ্রণববাবুদরে ‘সহযোগতিামূলক’ আধপিত্যবাদী চাপ প্রতহিত করতে পারবে না। 
উপমহাদশেে নতুনভাবে বপিজ্জনক এক স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হতে চলছে।ে তার উত্তাপ ও বৃহৎ শক্তি এবং বৃহৎ প্রতবিশেীর চাপ থকেে দশেরে স্বাধীনতা ও র্মযাদা রক্ষা করতে হলে অন্তত বৃহত্তর জাতীয় ইস্যুগুলোতে দুই প্রধান রাজনতৈকি দলরে মধ্যে এমনকি র্সবদলীয় ভত্তিতিে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। নইলে দশে তো বপিন্ন হবইে, দুই প্রধান দলও কতদনি বাংলাদশেরে রাজনীততিে অস্তত্বি বজায় রাখতে পারব,ে সে সর্ম্পকে আমার মনে সন্দহে রয়ছে।ে মাইনাস টু থয়িোররি দশেী-বদিশেী উদ্ভাবকরা এখন আবার নতুনভাবে সক্রয়ি। 


লন্ডন : ২২ মে মঙ্গলবার ॥ ২০১২

সোমবার, ২১ মে, ২০১২

একদিকে হরতাল, অন্যদিকে দমননীতি কোন্ পথে দেশের মুশকিল আছান?


আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন যদি যথাসময়ে হয়, তার দূরত্ব এখনও দেড় বছরের মতো। তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যে গ্যাঞ্জাম শুর“ হয়েছে, তাতে দেশের পরিস্থিতি কোন্ দিকে গড়াবে, নির্বাচন যথাসময়ে হতে পারবে কিনা, হলে তার ফল কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে দেশের মাথাওয়ালা মানুষের মধ্যে তেমন মাথাব্যথা দেখছি না, যত মাথাব্যথা নির্বাচনে এবার কোন্ দল জয়ী হবে তা নিয়ে। 
এ মাসের গোড়ায় দিন আটেক ঢাকায় ছিলাম। যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তারা আগামী নির্বাচনের ফল সম্পর্কে একটা না একটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আমি তাদের প্রশ্ন করেছি, নির্বাচন যে যথাসময়ে হবে, সে সম্পর্কে আপনারা কি নিশ্চিত? বেগম খালেদা জিয়া তো বলেছেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়া না হলে তিনি নির্বাচন হতে দেবেন না। অন্যদিকে আমাদের আমেরিকান প্রভুরা বলছেন, বিরোধী দলের যোগদান ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই, অথচ আমরা সেই নির্বাচনের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করছি। এটা হচ্ছে কেন?
এই প্রশ্নের জবাব অনেকেই দেননি। এবিএম মূসার মতো আমার প্রবীণ সাংবাদিক বন্ধুও দেননি। দু-একজন বন্ধু বলেছেন, বর্তমান আš—র্জাতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে যথাসময়ে নির্বাচন না হয়ে উপায় নেই। যারা এক-এগারোর পুনরাবির্ভাবের কথা ভাবছেন তারা আহম্মকের ¯^র্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এখন অনেক বেশি সতর্ক ও সচেতন। তারা জানেন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি মিলিটারি ক্যু’র অনুক‚ল নয়। আর কোন কারণে তারা সেই ক্যু ঘটাতে পারলেও দেশের অসম্ভব জটিল জাতীয় ও আš—র্জাতিক কোন সমস্যার তারা মোকাবেলা করতে পারবেন না। এক-এগারোর মতো তারা লেজেগোবরে এক হয়ে যাবেন। তার চেয়ে কোন রাজনৈতিক দলকেই নিধিরাম সর্দারের মতো ¶মতায় রেখে তারা যদি সব রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগের, এমনকি নেপথ্যে বসে রাষ্ট্রীয় ¶মতায় প্রভাব বজায় রাখার সুযোগ পান, তাহলে খামোকা আবার দুর্নামের বোঝা বইতে কেন যাবেন? পাকি¯—ানে সামরিক বাহিনীর অবস্থা তারা দেখছেন না? 
কারও কারও মুখে এসব কথা শুনে আমার মনে হয়েছে, এক-এগারোর আবার আগের চেহারায় আবির্ভাব সম্ভবত সম্ভব নয়। আবার তত্ত¡াবধায়ক সরকার পদ্ধতি আওয়ামী লীগ সরকার মেনে নিলেই সমস্যার সমাধান হবে, তাও নয়। বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্র যারা জানেন, তারা বোঝেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি একটা অজুহাত। যে কোন ছলছুতোয় বিএনপি দেশে রাজনৈতিক স্থিতিহীনতা টিকিয়ে রাখতে চায় এবং যে কোন উপায়ে ¶মতায় যেতে চায়। তাদের আসল ল¶্য, তারেক রহমান ও কোকোকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা ও দÊ থেকে মুক্ত করা এবং ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভÊুল করা। সঙ্গে আরও ছোটখাটো এজেন্ডা তো আছেই। 
এখন যদি আওয়ামী লীগ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি মেনেও নেয়, বিএনপি তখন তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠনের মেকানিজম সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করবে। একেবারে তাদের হাতের মুঠোর তত্ত¡াবধায়ক সরকার (ইয়াজউদ্দীনের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মতো) না হলে কোন তত্ত¡াবধায়ক সরকারই তাদের কাছে নিরপে¶ ও গ্রহণযোগ্য মনে হবে না। তারপর দেশী-বিদেশী চাপে যদি তারা ভবিষ্যতের তত্ত¡াবধায়ক সরকারকে মেনেও নেন, তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি জয়ী না হলে সেই নির্বাচনের ফল তারা মেনে নেবেন না। বলবেন, এই তত্ত¡াবধায়ক সরকারকেও আওয়ামী লীগ হাইজ্যাক করেছে এবং বিএনপির নিশ্চিত বিজয় ছিনতাই হয়ে গেছে। অতঃপর তারা যদি বিদেশী দাতাসংস্থাগুলোর (বিশেষ করে আমেরিকার) চাপে নির্বাচনের রায় মেনে সংসদেও যান, দু-একদিনের মধ্যেই কোন ছলছুতোয় সংসদ বর্জন স্থায়ীভাবে শুর“ করবেন; কিন্তু সংসদ সদস্যের সব বেতন-ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধা অনৈতিকভাবে গ্রহণ করতে থাকবেন। অর্থাৎ সংসদীয় গণতন্ত্রকে দেশে কিছুতেই কার্যকর হতে দেয়া হবে না। দেয়া হবে, যদি বিএনপিকে বৈধ বা অবৈধ যে কোন পথে ¶মতায় যেতে বাধা দেয়া না হয়। 
সুতরাং যারা ভাবেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিলেই দেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে, আমি তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করি না। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও বিএনপি জয়ী না হলে সেই রায় মানবে তার কোন অতীত উদাহরণ নেই। একমাত্র জয়ী হলেই তারা তাকে গণরায় আখ্যা দিয়ে মেনে নেয়ার গণতান্ত্রিক উদারতা দেখান। বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল, তার নিরপে¶ চরিত্র সম্পর্কে অতিবড় ক্রিটিকও প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাননি। কিন্তু সেই তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর বিএনপি কি সেই নির্বাচন ফল প্রথমে মানতে রাজি হয়েছিল? দাতা দেশগুলোর চাপে পরে তারা রাজি হন। 
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলও কি বিএনপি এখনও মেনে নিয়েছে? একমাত্র বিএনপির দ্বারা মনোনীত এবং তাদের নির্দেশে চালিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার (ইয়াজউদ্দীনের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মতো) ছাড়া আর কোন তত্ত¡াবধায়ক সরকার বিএনপি মেনে নেবে তা তো মনে হয় না। তাহলে যারা ভাবেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রশ্নে বিএনপির দাবি মেনে নিলেই দেশের সব মুশকিল আছান হয়ে যাবে, তাদের চিš—ায় সারল্য আছে, বা¯—বতা নেই। বিএনপির জামার আ¯ি—নের নিচে আরও কত দাবির বিড়াল লুকিয়ে আছে তারা তা এখনও দেখেননি। 
বিএনপি যেমন গোঁ ধরেছে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়া ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না, তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারেরও গোঁ, তারা তত্ত¡াবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে আর ফিরে যাবেন না। এই পদ্ধতির মাজেজা তারা ইয়াজউদ্দীনের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে দেখেছেন। আওয়ামী লীগ তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতি ছাড়া অন্য যে কোন পদ্ধতিতে (যেমন অš—র্বর্তীকালীন সরকার গঠন) নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনায় রাজি। তারা চান, বিএনপি এ ব্যাপারে সংসদে আসুক এবং তাদের প্র¯—াব উত্থাপন কর“ক। বিএনপির ভয়, আওয়ামী লীগ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাদের এই প্র¯—াব অগ্রাহ্য করবে। সুতরাং সংসদের বাইরে দ্বিপ¶ীয় আলোচনা হোক। 
এই দ্বিপ¶ীয় বৈঠকও যে সফল হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ দুই প¶েরই যেখানে মনোভাব, ‘সালিশ মানি, কিন্তু তালগাছটা আমার চাই’, সেখানে সমঝোতা অসম্ভব। সংলাপ হলেই সমঝোতা হবে এমন থিয়োরিতে আমি বিশ্বাসী নই। এখানেই প্রশ্ন, তাহলে কী হবে? এই দেশব্যাপী সংঘাত, অস্থিরতার রাজনীতিকে চলতে দেয়া কি ঠিক হবে? 
এই প্রশ্নের জবাব, দুই প¶ের মধ্যে সংলাপ হলেই সমঝোতা হবে এমন বিশ্বাস আমার নেই বটে, তবুও দেশের প্রধান দুটি দলের মধ্যে সংলাপ প্রয়োজন। তাতে দেশের প্রধান ইস্যুগুলোতে সমঝোতা হবে এমন আশা করি না; কিন্তু রাজনীতিতে সংঘাত এড়ানোর জন্য দুই প¶ের মধ্যে একটা পন্থার কথা আলোচিত হতে পারে। বিরোধী দল যদি দাবি আদায়ের ল¶্যে হরতাল ডাকার নামে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং পাবলিক প্রোপার্টি ধ্বংস করার নীতি ত্যাগ করে এবং সরকারও বিরোধী দলকে শাšি—পূর্ণভাবে আন্দোলন করার সুযোগ দানের ল¶্যে দমননীতি প্রয়োগের পন্থা বর্জন করে, তাহলে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশ ফিরে আসতে পারে। 
একবার দেশে যদি গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশ ফিরে আসে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের সব বড় বড় সমস্যার ব্যাপারে দু’দলের মধ্যে আলোচনায় বসা, এমনকি একটি সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব হলেও হতে পারে। আমাদের পলিটিক্যাল এলিট ক্লাস যদি তাদের বর্তমানের নিরপে¶তার ভান ত্যাগ করে এবং ‘সংলাপ চাই, সংলাপ চাই’ বলে ক্রমাগত চিৎকার পরিহার-পূর্বক আগে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে, তাহলে বর্তমান অচলাবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। 
প্রবীণ সাংবাদিক বন্ধু এবিএম মূসা আমাকে একটি চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সামরিক সরকারকে আমরা ¯ৈ^রাচারী সরকার বলি। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারও যদি জনগণের দাবির তোয়াক্কা না করে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো চলতে থাকে, তাহলে তাকে আমরা বলি ¯ে^চ্ছাচারী সরকার। এই ¯ৈ^রাচারী সরকার ও ¯ে^চ্ছাচারী সরকারের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। সামরিক ¯ৈ^রাচারী সরকারের একটা বিকল্প আছে, তা গণতান্ত্রিক সরকার। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার ¯ে^চ্ছাচারী হলে তার বিকল্প কী?’
বন্ধুবর মূসার এই কথাটি বাংলাদেশের প্রে¶িতে অত্যš— তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশে দুটি প্রধান দল গণতান্ত্রিক পথেই ¶মতায় আসে। তারপর তারা একে অন্যকে অনুসরণ করে ¯ে^চ্ছাচারী মূর্তিতে আবিভর্‚ত হন। কেউ কম, কেউ বেশি। গণতান্ত্রিক সরকার ¯ে^চ্ছাচারী মূর্তি ধারণ করলে তার শাšি—পূর্ণ প্রতীকার-পন্থা নির্বাচন অনুষ্ঠান। জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন ঘটায়। বাংলাদেশে সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদ্ধতি নিয়েই বিতর্ক চলছে; রাজনীতিকে সংঘাতময় করে তোলা হচ্ছে। এই সংঘাত দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে, একটি রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের দিকে কি? 
দেশে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা আজ কোন্ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তা কেবল বিএনপির ভাংচুরের খেলায় নয়, আওয়ামী লীগের মতো গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যমÊিত দলের একশ্রেণীর নেতা, এমনকি সংসদ সদস্যের আচরণেও দেখা যায়। গত শনিবার (১৯ মে) ঢাকার একটি দৈনিক সচিত্র প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, গফরগাঁওয়ের আওয়ামী লীগদলীয় এমপি ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াসউদ্দীন গাড়িতে বসে পি¯—ল হাতে জনতার দিকে গুলি ছুড়ছেন। এটা কাÊজ্ঞানহীন ¯ে^চ্ছাচারিতা। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এই ক্রমপ্রসারিত ¯ে^চ্ছাচার প্রতিরোধের উপায় কী? এর প্রতিরোধ অথবা প্রতিকার সুষ্ঠু নির্বাচন। জনগণ বুলেট দ্বারা নয়, ব্যালট দ্বারা ¯ে^চ্ছাচারী সরকারকে ¶মতা থেকে অপসারণ করে। কিন্তু বাংলাদেশে এই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচনেও এখন কালো টাকা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের কালো ছায়া প্রভাব ফেলেছে। 
তত্ত¡াবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে নির্বাচন হলেই নির্বাচন কালো টাকা ও দুর্নীতির প্রভাবমুক্ত হবে এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের নোবেল লরিয়েট অথবা ব্রিটেনের নাইট খেতাবধারী প্রাজ্ঞজনরা এ সম্পর্কে যতই প্রাজ্ঞ কথা বলুন না কেন! আওয়ামী লীগ যুক্তি দেখায়, গত সাড়ে তিন বছরে তাদের সরকারের অধীনে সিটি কর্পোরেশন থেকে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ পর্যš— অনেক নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনের অনেকগুলোতে তারা পরাজয়বরণ করেছেন, তবু কোন কারচুপির অভিযোগ উঠতে দেননি। সুতরাং আগামী সাধারণ নির্বাচনও এই সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপে¶ভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং এটাই গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতি। 
এটা সুযুক্তির কথা, কিন্তু বা¯—বতার কথা নয়। বা¯—বতা হল, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ¯^চ্ছ ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে এটা যাতে জনগণ বিশ্বাস না করে সে জন্য বিএনপি প্রচÊভাবে তাদের প্রচারডঙ্কা বাজাচ্ছে। আমাদের এলিট শ্রেণীর একটা অংশও তাতে নিরপে¶তার ভান করে সমানে তাল মেলাচ্ছে। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের মধ্যেই এখন একটা যুদ্ধংদেহী ভাব। আগে এই যুদ্ধংদেহী ভাবটা দূর করতে হবে। বিরোধী দলকে ভাংচুরের হরতাল এবং সরকারকে দমননীতির হার্ডলাইন থেকে ফিরে আসতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির শাšি—পূর্ণ পরিবেশ ফিরে এলে তারপর সংলাপ। সমঝোতার কথা এখনই ভাবার দরকার নেই। সমঝোতা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। 
বিএনপি নেতাদের বোঝা উচিত, জনসমর্থনহীন, ভয় দেখানো হরতাল দ্বারা সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে না। সরকারেরও জানা উচিত, পাইকারি গ্রেফতার, জেল-জুলুম দ্বারা বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করা যাবে না। সাময়িকভাবে ¯ি—মিত করা যাবে। দু’প¶ই সংলাপে বসুন। সামগ্রিক সমঝোতা বা আংশিক সমঝোতার জন্যও নয়, এই সংলাপ হবে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির শাšি—পূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পন্থা উদ্ভাবনের জন্য। এই পন্থা উদ্ভাবিত না হলে আগামীতে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি ¶মতায় যাবে সে সম্ভাবনা মোটেই নিশ্চিত নয়। 
লন্ডন, ২০ মে রোববার ।। ২০১২


একদিকে হরতাল, অন্যদিকে দমননীতি কোন্ পথে দেশের মুশকিল আছান?